বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক পরিবহণ, মেইলিং অপারেট এবং কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে ১৮৯৮ সালের ডাক আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ২০১০ সালে আইনটির কিছু কিছু ধারা সংশোধন করা হয়। খসড়া ডাক আইনানুসারে চিঠিপত্র, ডকুমেন্ট আদান-প্রদানের পাশাপাশি রেমিট্যান্স ট্রান্সফার, ব্যাংকিং সেবা ও ডাক জীবনবিমা সেবা দেবে ডাক বিভাগ। বর্তমানে শুধু ডাক সঞ্চয় ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয়পত্র সেবা প্রদান করছে ডাক বিভাগ। নতুন করে ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের নামকরণ করা হবে পোস্ট ব্যাংক।
আইনের খসড়ায় বলা হয়, যেখানে সেখানে ডাক বহনকারী যানবাহন থামানো যাবে না। নির্ধারিত স্থানে গেলে ত ল্লাশি করা যাবে। আইনটি ‘দ্য পোস্ট অফিস অ্যাক্ট-২০২৩’ নামে অভিহিত হবে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় দুর্যোগে বিনামূল্যে ত্রাণসামগ্রী বহন করবে ডাক বিভাগ। ডাকদ্রব্য বিমার আওতায় আনা হবে। ডাকদ্রব্য হারানো গেলে প্রেরককে বিমার টাকার সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দেবে সরকার। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার (ইএমটিএস) এককভাবে ডাক বিভাগ পরিচলনা করবে। ডাকযোগে কোনো ধরনের বিস্ফোরক পদার্থ, বিপজ্জনক, নোংরা, বিষাক্ত বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু এবং জীবন্ত প্রাণী পাঠানো যাবে না। ডাকদ্রব্যের খামের ওপর রাষ্ট্রবিরোধী, বিদ্রুপাত্মক, হুমকি বা আক্রমণাত্মক কোনো শব্দ, চিহ্ন বা নকশা ব্যবহার করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক, রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য কিংবা হাতের লেখা ডাকযোগে প্রেরণ করা যাবে না। আইনটির খসড়া থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানতে চাইলে ডাক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. হারুন আর রশিদ গত শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আইনটি বেশ পুরোনো। যুগোপযোগী করে নাগরিকসেবা প্রদানের জন্য কাজ করছি। আইনটি চ‚ড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোয়ারি দিয়েছেন। সেগুলোর জবাব শিগগিরই দেওয়া হবে। প্রেরক এবং প্রাপক কাউকে এক বছরের মধ্যে না পাওয়া গেলে মানি অর্ডারের অর্থ সরকারের কাছে দাবি করা যাবে না। ডাক জীবনবিমা চালু করবে ডাক বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীনে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে জীবনবিমা পরিচালিত হবে।
এ আইন পাশ হলে সরকার লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। একটি জাতীয় কুরিয়ার সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির গতিরোধ করা যাবে না। তবে রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তার স্বার্থে গন্তব্যে পৌঁছার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ত ল্লাশি করতে পারবে। খসড়া আইনে ডাক অধিদপ্তর ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক ডাকদ্রব্যাদি সংগ্রহ, বহন বা বিলি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডাক গ্রহণকারীর সামনেই প্রেরককে ঘোষণাপত্র দিতে হবে ‘এতে নিষিদ্ধ কোনো পণ্য নেই’। এ আইনের বিধিবিধান অমান্য করলে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো দ্রব্যাদি গ্রহণ, পরিবহণ, বিতরণ করলে ওই কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এ আইন ও বিধির শর্ত মেনে আবেদন করবে না তারা কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাবে না। যে প্রাপককে পাওয়া যাবে না বা মৃত ব্যক্তির কাছে পাঠানো ডাকের মাশুল প্রেরক বহন করবে।
খসড়া আইনের দশ অধ্যায়ে বিভিন্ন অপরাধ বা অনিয়মের জন্য ডাকসেবা প্রদানকারীদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান উলেখ করা হয়েছে। ডাক বিতরণ না করে ডাক বইয়ে ‘করেছেন’ লিখলে তার ছয় বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ডাকদ্রব্য চুরি, অসদুপায়ে আত্মসাৎ এবং ফেলে দিলে ডাক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কমপক্ষে সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। ডাকঘরে কর্মরত কোনো নারী কর্মকর্তা কর্মচারীকে কোনো ধরনের অশ্লীল উক্তি করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ ‘সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টাল ইলিমিনেশন অ্যান্ড প্রিভেন্ট পলিসি’র (বিএলএএসটি) অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়, ডাকটিকিটি বিক্রির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দাবি করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ২০ এবং ২১ ধারার বিধান লঙ্ঘন করে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পণ্য এবং অশ্লীল দ্রব্য ডাকযোগে প্রেরণ করলে সর্বোচ্চ এক বছর জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো ব্যক্তি ডাকঘরের চিঠির বক্স, ডাক ঘরের কাউন্টার, মেইল প্রসেসিং সেন্টার, ডাক বাছাইকেন্দ , সার্ভার রুম, কল সেন্টার, স্ট্যাম্প গোডাউন এবং ডাক ট্রেজারি নোংরা করলে কিংবা ক্ষতিকর পদার্থ নিক্ষেপ করলে তার সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ডাক অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী একক বা দলগতভাবে অধিদপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দিলে, দরপত্রে বাধা দিলে, তথ্য ফাঁস করলে, হুমকি দিলে এবং চাঁদা দাবি করলে তার বা তাদের কমপক্ষে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।