বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নন-ক্যাডার পদে এবার রেকর্ড চার সহস্রাধিক পরীক্ষার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ৪০তম বিসিএস থেকে এই নিয়োগের সুপারিশ করা হচ্ছে। এটিই হবে নতুন বিধিমালা অনুযায়ী প্রথম কোনো নিয়োগের সুপারিশ। আগামী ১০ মে এই নিয়োগের সুপারিশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে।
নন-ক্যাডার বিধিমালা অনুযায়ী এর আগে এত সংখ্যক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। ফলে নতুন বিধিমালা নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল তার চূড়ান্ত সুফল পেতে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। নতুন বিধি জারি হলে একইসঙ্গে ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের ফলাফল ঘোষণা করতে পারবে পিএসসি। ফলে নন-ক্যাডার নিয়োগ নিয়ে যে দীর্ঘসূত্রতা ছিল—সেটি কেটে যাবে। সময়ের অপচয়ও রোধ হবে বলে পিএসসি কর্তৃপক্ষের আশা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন ইত্তেফাককে বলেন, এই প্রথমবারের মতো সময়োপযোগী বাস্তবমুখী নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দ্রুতই এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া যাবে—এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এতে লাভবান হবেন নন-ক্যাডার পরীক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, তারা না বুঝে এতদিন আন্দোলন করেছিল। বর্তমান কমিশন পরীক্ষার্থীবান্ধব। ৪০তম বিসিএস থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিধিমালা এখনো অনুমোদন না হওয়ায় ৪০ বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরপরই নতুন নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তবে পিএসসি ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ফলাফল প্রস্তুত করে রেখেছে। বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। ইতিমধ্যে চার ধাপে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে প্রায় চার সহস্রাধিক চাহিদা পেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। উত্তীর্ণ ৮ হাজার ১৬৬ জনের মধ্যে নন-ক্যাডার পদে ৪০ম বিসিএসে অপেক্ষামাণ আছেন ৬ সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী। পিএসসিতে এখনো পর্যন্ত সাড়ে ১ হাজার ৬০০ মতো প্রথম শ্রেণির অর্থাৎ নবম গ্রেডের শূন্য পদের তালিকা এসেছে। এছাড়া ১০ম গ্রেডে আরও সাড়ে ৭০০, ১১তম গ্রেডে ৮০টির মতো এবং ১২তম গ্রেডে ১ হাজার ৭০০ মতো পদ রয়েছে। এতো বিপুল সংখ্যক নন-ক্যাডার আগে কোনো বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করার নজির নেই।
বিগত কয়েকটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি পদে ৩৭০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫২২ জন, ৩৪তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ৪০৯ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৮৪৮ জন, ৩৫তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ৬৯২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৩১৪ জন, ৩৬তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ২৮৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৮ জন, ৩৭তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ৬৯২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৫১ জন, ৩৮তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ১ হাজার ৬৫৬ জন, দ্বিতীয় শ্রেনীতে ১ হাজার ৪১৮ জন এবং ৪২তম বিশেষ বিসিএসে প্রথম শ্রেণিতে ৫৬৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালে প্রণীত বিধি ২০০০১৪ সালে সংশোধন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ জুন নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির সুপারিশের সুযোগ দেওয়া হয়। বিধিতে বলা আছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২৮তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধি সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। বিধির বাইরে বিগত পিএসসি কর্তৃপক্ষ ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। যদিও সেটি বিধি সম্মত হয়নি।
নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রমের বৈধতা চেয়ে গত বছরের ২৩ আগষ্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়। এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে। এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা চাওয়া হয় ঐ চিঠিতে। নতুন বিধি সংশোধন হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা চূড়ান্ত করা হলে পরবর্তী নন-ক্যাডার নিয়োগ দিতে পারবে পিএসসি। ঐ বিধি পাশ হওয়ার পরই পিএসসি দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪০তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ নন-ক্যাডারদের বিভিন্ন পদে সুপারিশের তালিকাও প্রকাশ করতে পারবে। নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ক্যাডারের পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তারই অংশ হিসেবে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের পদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পিএসসি। এতে এবার ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের পাশাপাশি ১ হাজার ২২টি নন ক্যাডারের পদের কথাও বলা হয়েছে। এখন থেকে বিজ্ঞপ্তিতে বিধি অনুসরণ করেই নিয়োগ দেবে পিএসসি। যদিও এর আগে গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হত। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। নতুন আরেকটি বিসিএসের ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা এলে পিএসসি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করত। আগে সরকার থেকে যে পদের চাহিদা আসত পিএসসির সেটির তালিকা প্রকাশ করত। এতে করে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হতো না।