অর্থ খরচে লাগাম টানার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জনগণের অর্থ খরচে লাগাম টানার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এডিপিতে অর্থ ব্যয় করতে কৃচ্ছ সাধন করতে হবে। অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে হবে। তবে যে খরচ একান্তই প্রয়োজন তা বন্ধ করা যাবে না। অর্থাৎ খরচে সাবধান হতে হবে। বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়ার সময় তিনি এ নির্দেশ দেন। একনেকে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরের এডিপি। নতুন এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে মোট ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। উপস্থিত ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, জিইডির সদস্য ড. মো. কাউসার আহম্মেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকী, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।

ব্রিফিংয়ে এমএ মান্নান জানান, জনগণের অর্থ ব্যয়ে আরও সাবধান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন আয়েশি, বিলাসী এবং অহেতুক খরচ বাদ দিতে হবে। প্রথাগতভাবে এসব ব্যয় ধরা হলেও এখন আর সেটি হবে না। রপ্তানির জন্য বিকল্প বাজার খোঁজার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব বাঁধা (গিট্টু) আছে সেগুলো ছাড়াতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে বৈদেশিক ঋণকে সরাসরি ঋণ এবং অনুদানকে অনুদান বলা হবে। প্রকল্প সাহায্য বা বৈদেশিক সহায়তা বলা হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে বলে এসেছেন, আমরা ঋণ নেই এবং ঋণ সুদসহ পরিশোধ করি। তাহলে এত শর্ত দেওয়া হয় কেন। এরপর এমন কোনো শর্ত দেবেন না যাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, সংকটময় সময়ে এটিই সরকারের শেষ এডিপি। এটি যাতে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এডিবিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চলতি সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৬১ হাজার ৮১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে ১৪ হাজার ১৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি ১৪টি খাতে বরাদ্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ২৭ হাজার ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যে ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক্ষেত্রে বরাদ্দ আছে আট হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১১৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৭৮টি এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই প্রকল্প ২২টি।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্প : আগামী অর্থবছরে এডিপিতে সর্র্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এরপর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে নয় হাজার ৮১ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে আট হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি। হযরত শাহাজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণে পাঁচ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্টে চার হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে তিন হাজার ৯১১ কোটি টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে তিন হাজার ৭৭৮ কোটি এবং মেট্রোরেল-৬ এ তিন হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment