বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চা চাষে সফলতা এসেছে। এই উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় তরুণ তারিকুল ইসলাম মজুমদার। তিনি জানান, এ অঞ্চলে বছরে গড় বৃষ্টিপাত কম হলেও কৃত্রিম উপায়ে পানির ব্যবস্থা করে চা চাষে সফলতা এসেছে। রোপণের প্রায় দুই বছর পর বিটি-২ জাতের চারা থেকে বর্তমানে চা পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে শিগগির প্রয়োজনীয় মেশিনও আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। লালমাই পাহাড়ে চা চাষের বিষয়ে মাটি ও আবহাওয়া পরীক্ষা করে স্থায়ী টেকসই বাগান করা যায় কিনা, তা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
সরেজমিনে জানা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর এলাকার লালমাই পাহাড়ে চাষ করা হয়েছে চা। লাল মাটির দুটি পাহাড়ের ওপরে ও ঢালুতে চারা লাগানো হয়েছে। ২০২১ সালে চাষ করা হলেও এবারই প্রথম বাগান থেকে পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বৃষ্টির বিকল্প হিসেবে পাহাড়ের ওপরে বসানো হয়েছে ইলেকট্রিক মোটর ও পানির ট্যাঙ্ক। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে প্রতিদিন বাগানে পানি ছিটানো হচ্ছে। বাগানে শেড ট্রি বা ছায়াবৃক্ষ হিসেবে লাগানো হয়েছে শজনে ও কড়ই গাছ। ফলে চৈত্রের এই গরমেও সবুজের স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে এই বাগান। বর্তমানে প্রতিদিন ৩/৪ জন শ্রমিক চা পাতা তুলছেন। রাজু সিং নামে এক শ্রমিক জানান, তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। গত মার্চ মাস থেকে চা পাতা তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে হাজার কেজি পাতা তুলেছেন।
উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, লালমাই পাহাড়ে শুরুতে চা গাছ লাগানো দেখে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিল। তবে তাঁর বন্ধু মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার খাসিয়া সম্প্রদায়ের একটি পুঞ্জির নেতা জিডি সান এ বিষয়ে তাঁকে সহায়তা করেছেন। একদিন লালমাই পাহাড়ের ভূমি ঘুরে দেখে জিডি সান মতামত দেন, এখানে চা চাষ সম্ভব। তাঁর পরামর্শেই তারিকুল ইসলাম ২০২১ সালের মার্চে তিন হাজার চা গাছ লাগান। এগুলোর অবস্থা ভালো দেখে তিন মাস পর আরও তিন হাজার চারা লাগানো হয়। বর্তমানে প্রায় এক একর জায়গায় তাঁর চা বাগানে ১০ হাজার চারা রয়েছে। এখানে তাঁর একসঙ্গে সাড়ে ছয় একর জমি আছে। এখন তারিকুল পরিকল্পনা করছেন, পুরো ভূমিতে চা বাগান করবেন। এই জমিতে কিছুদিনের মধ্যে আরও ২০ হাজার চারা লাগানো হবে।
এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, লালমাই পাহাড়ের মাটি অত্যন্ত উর্বর। চা উৎপাদনে মাটিতে যে ক্ষার থাকার কথা, লালমাইয়ে তা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোক্তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও পাহাড়ে চা চাষে আগ্রহী হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, লালমাই পাহাড়ের অনেক জমি এখনও পরিত্যক্ত। পরিকল্পিতভাবে এখানে যে কোনো ফসল ফলানো সম্ভব। আমরা লালমাই পাহাড়ে চা চাষের এলাকাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। যদিও এ অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কম। তাই অতিরিক্ত ব্যয় হলেও উদ্যোক্তা কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষে অন্যরা এগিয়ে এলে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে।
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, লালমাই পাহাড়ে চা চাষে আগ্রহীরা আবেদন করলে বোর্ডের টিম সেখানে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করবে। লালমাই পাহাড়ে স্থায়ী ও টেকসই কোনো চা বাগান করা যায় কিনা, এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মতামত দেওয়া হবে। ইতিবাচক রিপোর্ট পেলে চা বোর্ড থেকে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।