বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্কারোপের চিন্তা করছে সরকার। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর, এক্সক্যালেটর, লিফট ও ফ্যান আমদানিতে বাড়তি শুল্ক রয়েছে। আগামী বাজেটে দেশীয় উৎপাদিত এসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে উচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমাতে কিছু কিছু খাতে দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। আর কিছু খাতে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কমিয়ে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। সাধারণত দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে। আগামী বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নিলে এসব খাতের পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে আগামী বাজেটে, যাতে খরচ বাড়লেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। একই সঙ্গে আমদানি নিরুৎসাহিত হলে বাজারে ডলারের চাহিদাও কমবে।
সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমাতে আইএমএফের চাপ রয়েছে। এতে কিছু কিছু খাতের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হবে। এতদিন ধরে দিয়ে আসা সুবিধার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ কম ছিল। ভ্যাট সুবিধা তুলে নিলে এগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাই স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় দেশে উৎপাদিত পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ ক্ষেত্র বিশেষে আমদানি খরচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রেফ্রিজারেটরের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নামমাত্র রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এ কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় রেফ্রিজারেটরের উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও বাড়বে। এ বাড়তি খরচের পর বাজারে টিকে থাকতে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ৬ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আরোপিত রয়েছে। আর বিদেশ থেকে রেফ্রিজারেটর আমদানি করতে হলে শুল্ক দিতে হয় প্রায় ১২০ শতাংশ পর্যন্ত। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানি করা রেফ্রিজারেটরের শুল্ক হার আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে আগামী বাজেটে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বাজেটে ফ্যান, লিফট ও এক্সক্যালেটরের মতো বিবিধ পণ্যের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বাড়তে পারে। উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে লিফট এবং এক্সক্যালেটর উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে ৬ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দেন। ভারী শিল্প খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে আগামী বাজেটে লিফট এবং এক্সক্যালেটরের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হতে পারে বলেও নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও বলছেন, স্থানীয় শিল্পগুলোকে আমদানিকৃত পণ্যের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার জন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। মূলত উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপ করে, সরকার দেশজ উৎপাদন ও প্রস্তুতকারক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে চায়। এতে একদিকে আমদানি ব্যয়ও কমবে, অন্যদিকে ডলারও সাশ্রয় হবে।
এর আগে প্রাক-বাজেট আলোচনার বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম দেশীয় শিল্প সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য জোর দেন। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।