বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কর্মজীবী মায়েদের শিশু সন্তানদের জন্য ৬৪টি জেলায় ডে-কেয়ার সেন্টার করবে সরকার। নারী ও শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এগুলো করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এ তথ্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
নারী ও শিশুর জন্য মধ্যমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০২৩-২৪ হতে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত সময়ে যে কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করতে চাই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কর্মজীবী মায়েদের শিশু সন্তানদের জন্য ৬৪টি জেলায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টিতে স্যানিটারি টাওয়াল প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ; কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল দেয়া।
এছাড়া নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, শেখ হাসিনা নারী কল্যাণ ডরমেটরি ও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, অবসরকালীন আপনালয় স্থাপন, ৪ বছর বয়সি শিশুদের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, গ্রামীণ এলাকার কওমি মাদ্রাসার শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ‘নিরাপদ ইন্টারনেট-নিরাপদ শিশু’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ৬৪ জেলায় কর্মজীবী হোস্টেল ও জিম সেন্টার স্থাপন ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
জুলাইয়ে প্রাথমিকের স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব : দেশের ৩৫টি জেলার ১০৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য চলমান ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম সম্প্রতি শেষ হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে ফের নতুনভাবে এ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম (জুলাই ২০২৩-২০২৬) প্রণয়নের কাজ চলছে। দরিদ্র-পীড়িত এলাকার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৩৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৩৮টি শ্রেণিকক্ষ ও ২৯ হাজার ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৫ হাজার ১১৮টি ওয়াশব্লক নির্মাণ এবং ৭৩ হাজার ৭৭২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩ হাজার ৪০৮টি শ্রেণিকক্ষ ও ১৩ হাজার ৩৬৬টি ওয়াশব্লক নির্মাণ এবং ৭ হাজার ৬৫৩টি টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ চলছে।
বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে লাগবে দ্বিগুণ শুল্ক : দেশে স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ রোধ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে এবারের বাজেটে। আগে বিদেশ থেকে ফেরার পথে একজন যাত্রী ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণ (দুটি বার/স্বর্ণ পিণ্ড) আনতে পারলেও বর্তমানে তা কমিয়ে ১১৭ গ্রামে নামানো হয়েছে। এছাড়া যেখানে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের জন্য দুই হাজার টাকার শুল্ক পরিশোধ করতে হতো, নতুন সংশোধনীতে তা আরো দুই হাজার বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশকালে এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুল সংশোধন করে স্বর্ণবার আনার ক্ষেত্রে ভরিপ্রতি (১১.৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি। কেউ যদি এর অতিরিক্ত স্বর্ণ আনেন সেক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান নেই, তাই স্বর্ণ বাজেয়াপ্তকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন করার প্রস্তাব করছি।’
উল্লেখ্য, বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে স্বর্ণ নিয়ে আসার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে ২০২২ সালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৫৪ টন সোনা এসেছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর পরিমাণের দিক দিয়ে তা এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিমানযাত্রীরা বৈধ পথেই এসব স্বর্ণ এনেছেন। তবে স্বর্ণ আনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার ওপর প্রভাব পড়ছে। সে জন্যই স্বর্ণ আনার ওপর কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা : এবারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের (জন নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা) জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এর আগের বার সংশোধিত বাজেট ছিল ২৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এই হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবারের বাজেটে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের অধীন রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্ট গার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আছে কারা অধিদপ্তর, বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তর, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
এবারের বাজেটে দেখা যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। আর সুরক্ষা সেবা বিভাগের বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।