ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, দেশের কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানো, তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পূর্ণমাত্রায় চালু এবং গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে চলমান লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামী সপ্তাহেই লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা কমে এসেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে।
গত সপ্তাহে দেশে তাপপ্রবাহের মধ্যে লোডশেডিং বেড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিদ্যুতের লোডশেডিং কমানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরকার এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, গতকাল থেকে তাপমাত্রা কমে এসেছে। আমরা এরই মধ্যে আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে তারা সরবরাহ বাড়ায়। এ ছাড়া কয়লা ও তেলভিত্তিক কয়েকটি কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্যও বলা হয়েছে।
এদিকে, গত ৬ জুন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে সব কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ
সরকার স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনার চিঠিতে ৬টি কার্যক্রম পালন করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো, গ্যাস উৎপাদনকারী ৩টি দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি তাদের উৎপাদন বর্তমান হার ধরে রাখা ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিছু উৎপাদন বৃদ্ধি করা, শেভরন ও তাল্লোর উৎপাদন বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া বিতরণ কোম্পানিগুলো বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করছে, তা ঠিক রাখতে হবে। এ ছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপের গোড্ডা পাওয়ার প্লান্ট থেকে বর্তমানে কমবেশি ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এখানে আরও ৩০০ মেগাওয়াট বাড়ানো হবে। এ ছাড়া এসএস পাওয়ার বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এসএস পাওয়ার থেকে ৫০০ মেগাওয়াট নেওয়া হবে। এ ছাড়া তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো শুধু সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছাড়াও চালানো হচ্ছে। এখান থেকে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী অতিরিক্ত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র গত সোমবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে লোডশেডিং পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বর্তমানে পেট্রোবাংলা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দৈনিক ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। এর বিপরীতে গ্যাস থেকে উৎপাদন হচ্ছে কমবেশি ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও বাড়াতে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ালে আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, বাঘাবাড়ি, টঙ্গী, ভেড়ামারাসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
এদিকে, তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানোর পরিকল্পনা করা হলেও নেওয়া অয়েলের মজুত কমে আসায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিপিসির তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত মজুত ছিল ২৮ হাজার ৬৯৩ টন, যা দিয়ে আর ১০ থেকে ১২ দিন চলবে। বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগামী ২০ জুন ২৫ হাজার টন অয়েল নিয়ে জাহাজ আসবে। ফলে মজুত কমে এলেও চিন্তার কিছু নেই।