রাজধানীতে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সেবা সহজলভ্য করতে বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পাসপোর্ট অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি)। এরই অংশ হিসাবে ঢাকায় আরও অন্তত পাঁচটি পাসপোর্ট অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পাসপোর্টের বিদ্যমান জনবল কাঠামোতেও আসছে পরিবর্তন। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার জনবলের একটি প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে এখন সাতটি অফিস থেকে পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও ক্রমবর্ধমান পাসপোর্ট-প্রত্যাশীদের চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য নতুন করে আরও পাঁচটি অফিস স্থাপনের আলোচনা চলছে। প্রস্তাবিত অফিসগুলো হবে রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, গুলশান, নিউমার্কেট এবং ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায়। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আরও দুটি নতুন অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিআইপি। এ প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাই পাসপোর্ট সেবার মান উন্নত হোক। কিন্তু এক জায়গায় বিপুলসংখ্যক লোকসমাগমের ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ঢাকায় একাধিক পাসপোর্ট অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অধিদপ্তরে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। প্রস্তাবিত জনবল পাওয়া গেলে পাসপোর্ট সেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ক্রমেই বিদেশ গমনেচ্ছুদের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাসপোর্টের চাহিদা। রাজধানী ছাড়াও জেলা-উপজেলার আঞ্চলিক অফিসগুলোয় পাসপোর্ট-প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ব্যয় করেও লাভ হচ্ছে না। বরং ফল হচ্ছে উলটো। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে পাসপোর্ট-প্রত্যাশীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এছাড়া সংকটের সুযোগ নিচ্ছে দালালচক্র এবং অধিদপ্তরের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরে জনবল সংকট প্রকট। বর্তমানে অধিদপ্তরে জনবলের সংখ্যা সাকুল্যে ১ হাজার ৩০০। এর একটি বড় অংশ প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকায় মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত জনবলের বাস্তব সংখ্যা অনেক কম। জনবল সংকট মেটাতে অন্তত ১০ বছর ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু জনবল নিয়োগের জট খোলেনি। তবে সম্প্রতি নতুন করে চার হাজার জনবলের একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নতুন জনবল কাঠামো অনুমোদিত হলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি নানা কারণে পাসপোর্টের চাহিদা বাড়লেও এখনো অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পাসপোর্টধারী নাগরিকের সংখ্যা বেশ কম। দেশের ১৭ কোটি নাগরিকের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন কোটির হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ২১ শতাংশ পাসপোর্টধারী। পাসপোর্টের উচ্চ ফি এবং জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনেকেই পাসপোর্ট গ্রহণে আগ্রহী নন। এছাড়া পাসপোর্ট সেবা দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচিত।