বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পরিবেশ রক্ষা ও যানজট নিরসনে কঠোর হচ্ছে বিআরটিএ
দেশে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। সেই সঙ্গে সড়কে যানজট এখন নিত্যচিত্র। তবে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলোকেই দায়ি বলে মনে করে বিআরটিএ। এসব গাড়ি পরিবেশ বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে উঠেছে। ফিটনেস বিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়ির রুখতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও বিআরটিএ এবার আঁট-ঘাট বেধেঁ মাঠে নামছে।
রাজধানী ঢাকায় পুরনো লক্কর-ঝক্কর বাসগুলোকে রঙ করে আবার রাস্তায় নামানোর চর্চা মালিকদের দীর্ঘদিনের। এসব বাস রাস্তায় চলাচলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি তৈরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার বাসমালিকদের এ ধরনের আচরণের লাগাম টানতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এখন থেকে ২০ বছরের পুরনো বাস রাস্তায় নামতে দেবে না সংস্থাটি। ২০ বছর বয়সী বাস এবং ২৫ বছর বয়সী ট্রাক ডাম্পিং করবে বিআরটিএ।
এদিকে দীর্ঘ কয়েক বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে দেশের তাপমাত্রা। অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। এরই মধ্যে অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মানে প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। ফলে চরম ঝুঁকিতে পড়ছে জনজীবন। তবে এসব অস্বাস্থ্যকর বাতাস এবং অসহনীয় তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে গাছ কাটার পাশাপাশি কালো ধোঁয়া নির্গত মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলোকেও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন পরিবেশবিদরাও। পরিবেশবিদদের তথ্য মতে, পরিবেশ দূষণের অন্যতম তৃতীয় কারণ লক্কর-ঝক্কর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যানবাহন, যা বায়ু দূষণের জন্য ১৫ ভাগ দায়ী।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমাদের মেজর বায়ুদূষণের ৬টা উৎস রয়েছে। এর মধ্যে বায়ুদূষণের প্রথম কারণ বিভিন্ন নির্মাণকাজ। দ্বিতীয়ত ইটভাটা এবং তৃতীয়ত লক্কর-ঝক্কর মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। এই যানবাহনগুলো আমাদের ১৫ ভাগ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। যেসব যানবাহন বায়ুদূষণের জন্য দায়ী তার বেশিরভাগই গণপরিবহন। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো তুলনামূলকভাবে ফিটনেস থাকার কারণে বায়ুদূষণ হয় না।
ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, পরিবেশ অধিদফতর এবং বিআরটিএ ২০১৯ সালের একটা অ্যাসিভমেন্টে দেখা যাচ্ছে গণপরিবহনের প্রাই ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ ফিটনেস মেইনটেইন করে না। যেগুলো সড়কে চলে সেগুলো অধিকাংশই ডিজেল চালিত গাড়ি। আর ব্যাক্তিগত গাড়িগুলো সাধারণত অকটেন চালিত গাড়ি হয়ে থাকে। এ কারণে সড়কে যে লক্কর-ঝক্কর মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন গাড়ি আছে সেগুলো যখনই সড়কে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা হয়, কোনো অভিযান চলে তখনই তারা গাড়িগুলো সড়কে বের করে না। ফলে সড়কে গাড়ি শূন্য হয়ে যায়। তারা মোবাইলকোর্ট বসলেই আগে থেকে জেনে যায়। ফলে অভিযান চললে ফিটনেস না থাকা গাড়িগুলো রাস্তার বাইরে চলে যায়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, রাজধানীতে চলাচলকারী ৭৪ কোম্পানির মধ্যে ৩৬টি কোম্পানির গাড়ি সড়কে চলচলের অযোগ্য। এরই মধ্যে ২১ বার চিঠি দিয়েও সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা। তাই ঠিক না করে সড়কে গাড়ি নামালে কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি মালিক সমিতির।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা মনে করছি এই গাড়িগুলো যদি একবারে সড়ক থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে হয়তোবা যাত্রীদের চলাচলে গাড়ি সঙ্কট এবং মালামাল পরিবহনে গাড়ির সঙ্কট হতে পারে। আর লক্কর ঝক্কর গাড়ি বন্ধ করা ও এগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়া নির্ধারিত স্থানে বাস থামানো, ই-টিকিটিং ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং চুক্তিভিত্তিতে বাস বরাদ্দ দিলে কোম্পানিকে সাজার আওতায় আনার কথাও জানান তিনি।
বিআরটিএর তথ্য মতে, দেশে প্রায় ৩৪ হাজার বাস এবং ৩১ হাজার ট্রাক ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীতে লক্কর-ঝক্কর বাস বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে সড়কে লক্কর-ঝক্কর বাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কে চলা লক্কর ঝক্কর বাস এখন পরিবেশ বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে উঠেছে। তাই ২০ বছর বয়সী বাস এবং ২৫ বছর বয়সী ট্রাক ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ।
তথ্য বলছে, দেশে মোট ৭১ হাজার ৪৮১টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। তার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় অর্ধেক ৩৩ হাজার ১৭৪ টি বাস। আর এক লাখ ২৬ হাজার ২৩টি ট্রাকের মধ্যে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে ৩০ হাজার ৬২৩টি ট্রাক। পাশাপাশি রাজধানীতে চলাচলকারী ছয় হাজার বাসের ৮৭১টি বাসই লক্কর ঝক্কর। তাই সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বাসের ডাম্পিং এবং লক্কর-ঝক্কর বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়িগুলো আর রাস্তায় চলবে না। সেই ক্ষেত্রে গাড়ি রাস্তায় চললে ধরা পরলে আমরা সেগুলো আমরা ডাম্পিং করে ফেলবো। এর পরে এই ডাম্পিং গাড়িগুলো আমরা স্কেপ করে ফেলবো। এটাতো মানসিকতার বিষয়। একটা গাড়ি সুন্দর ফিটফাট হলে যাত্রীরা গাড়িতে উঠবে। চলাচল করেও শান্তি পাবে।