বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঋণখেলাপি হলে গ্রহীতার জামানতের ‘অস্থাবর সম্পত্তি’ বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া অস্থাবর সস্পত্তি পুনর্দখলও নেওয়া যাবে। খেলাপির হিসাব নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ও দখলে থাকা জামানত, হেফাজত ও সংরক্ষণ করবে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান।
এসব বিধান রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২৩। এ আইনে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৬ ধরনের অস্থাবর সম্পদকে গ্রহণযোগ্য জামানত হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যদিও বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের জামানত হিসাবে শুধু স্থাবর সম্পত্তিকে গণ্য করে।
সূত্রমতে, চলতি সপ্তাহে আইনটি জাতীয় সংসদে পাশের জন্য বিল আকারে উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইনের একটি সারসংক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে গত ১৫ মে এ আইনের চূড়ান্ত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
নতুন আইন কার্যকরের পর কারও প্রয়োজন হলে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত( ফিক্সড ডিপোজিট), সোনা-রুপা বা দেশের বাইরে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রাখা কাঁচামালের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, যে ১৬টি অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে সেক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিধি বাড়বে। আগে শুধু স্থাবর ছাড়া অন্য কোনো জামানতে ঋণ দেওয়া হতো না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে। কারণ পুকুরের মাছের ওপর ঋণ দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে মাছের প্রবাহ ওঠানামা করতে পারে।
অনেকে পুকুর লিজ নিয়ে চাষ করছেন। ফলে মালিকানা পরিবর্তন হতে পারে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব দিক বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু আইন করলে হবে না। অন্য দিকগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, এই আইনটি ব্যাংকিং খাতে পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ এটি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করা হয়েছে। আমি যদি বলি গুগলের সম্পত্তি আছে কিন্তু সেটি স্থাবর নয়, অস্থাবর। আর সেটি হচ্ছে গুগলের সফটওয়্যার। এটি দেখাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। কিন্তু বাজার দর অনেক বেশি। ফলে এ জাতীয় জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যাংক অবশ্যই ঋণ দিতে পারবে। এছাড়া একটি কোম্পানির গুডউইল থাকে। সে কোম্পানি গুডউইলের বিপরীতে ঋণ পেতে পারে। কারণ ওই কোম্পানির বাজার মূল্য আছে। তবে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। সে ব্যাপারে ব্যাংকের বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে সতর্ক থাকতে হবে।
আইনে আরও বলা হয়, একই অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে একাধিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া যাবে না। আর আইনের উদ্দেশ্য পূরণে প্রতি জেলা সদরে একাধিক বাণিজ্যিক বা সুরক্ষিত লেনদেন আদালতে প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সেক্ষেত্রে সরকার সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করবে।
সূত্রমতে, এ আইনে স্বর্ণ-রৌপ্য ও মেধাস্বত্বের মতো অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি হিসাবে জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব, অ্যাপস, সফটওয়্যার, শেয়ার, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্য, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন বিবেচিত হবে। আরও বিবেচনায় নেওয়া হবে, জলজ প্রাণী, আয়বর্ধক জীবজন্তু, মজুত করা কৃষিপণ্য, গাছ, বার্ষিক ভাতা ও বিমা পলিসির অধীন প্রাপ্য তহবিল এবং ডিবেঞ্চার ইত্যাদি।
ঋণের জন্য আবেদনকারী অস্থাবর সম্পত্তির ওপর মালিকানা থাকতে হবে। এছাড়া এর বাজার মূল্যও থাকতে হবে। পাশাপাশি ঋণের মেয়াদকাল পর্যন্ত অস্থাবর সম্পত্তির ন্যূনতম অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল থাকতে হবে। তবে বন্ধক রাখার জন্য অস্থাবর সম্পত্তির নিবন্ধন থাকতে হবে।
এছাড়া জামানত অস্থাবর সম্পত্তির লক্ষ্যে মূল্য নির্ধারণ ও সম্পদ নিবন্ধনের জন্য আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খসড়া তৈরি করে। এরপর গত মে মাসে খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বিদেশে অনেক আগে থেকেই এই আইন চালু থাকলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের আইন চালু হতে যাচ্ছে।
এ আইন প্রযোজ্য হবে যে কোনো ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, গৃহনির্মাণ ঋণদাতা করপোরেশন, কৃষি ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, সমবায় সমিতি এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ভূমি, বাড়ি এ ধরনের স্থাবর সম্পত্তিকেন্দ্রিক বন্ধকের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ব্যাংক যেতে চাইত না, আর আইনতও পারত না। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে মেধাস্বত্ব, ব্র্যান্ড ইত্যাদির মতো আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্পত্তির সংকীর্ণ সংজ্ঞা থাকাও উচিত নয়।
সূত্র আরও জানায়, এ আইনে পেশাগত সেবার ফি ব্যতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মজুরি, বেতন, ভাতা বা কমিশন, অন্য কোনো প্রকার শ্রম বা ব্যক্তিগত সেবার জন্য প্রাপ্য পারিশ্রমিক অস্থাবর সম্পত্তির আওতায় আসবে না।