বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সমুদ্র সম্পদ নিরাপদ রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের চোরাচালান দমন, মাদকদ্রব্য পাচার নিয়ন্ত্রণ ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে উচ্চগতি সম্পন্ন পাঁচটি জাহাজ চট্টগ্রাম কোস্ট গার্ডের বার্থে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দুটি ইনসোর পেট্রোল ভেসেল, দুইটি টাগ বোট ও একটি ফ্লোটিং ক্রেন।
বুধবার (২১ জুন) দেশীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সমুদ্রগামী এই পাঁচটি জাহাজের কমিশনিং করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল দশটায় পতেঙ্গার কোস্টগার্ডে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিশনিং করেন তিনি। উদ্বোধনের আগের দিন মঙ্গলবার (২০ জুন) পতেঙ্গা কোস্ট গার্ডে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি জাহাজই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
জাহাজগুলোতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বলে জানা যায়, এর মাধ্যমে বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি রোধ, সমুদ্রপথে মানব ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমানায় টহল ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নৌ দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনায়
সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের অপারেশনাল কার্যক্রম বেগবান হবে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সরকারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডে নির্মিত দুটি ইনসোর প্যাট্রল ভেসেল বিসিজিএস জয় বাংলা ও বিসিজিএস অপূর্ব বাংলা।
জাহাজ দুটির কর্মকর্তারা জানান, এই জাহাজটি মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে মানবপাচার, মাদকদ্রব্য পাচার, গভীর সমুদ্রে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণসহ বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত হবে। জাহাজটি ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি সম্পন্ন যে কোনো বোটকে ধরতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে এটাই উন্নত মানের জাহাজ।
আর খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত দুটি টাগ বোট বিসিজিটি প্রত্যয় ও বিসিজিটি প্রমত্ত এবং আরেকটি ফ্লোটিং ক্রেন বিসিজিএফসি শক্তি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাগ বোট বিসিজিটি প্রত্যয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট এম শাহীন আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, বিসিজিটি প্রত্যয় বোটটি দিয়ে তিন ধরনের কাজ করা হবে। সমুদ্রে দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজকে উপকূলে টেনে নিয়ে আসা, ধাক্কা দিয়ে সরানো এবং ১০০ মিটার দূরে থেকে অন্য জাহাজের আগুন নেভানো সম্ভব। ৩৫০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজকে এই বোট টেনে নিয়ে আসতে পারবে। এই বোটটি বাংলাদেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। বিসিজিটি প্রমত্ত বোটটিও একই ক্ষমতা সম্পন্ন।
ফ্লোটিং ক্রেন বিসিজিএফসি শক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিফ পেটি অফিসার (সিপিও) মো. মহাসিন আলী জানান, এই জাহাজটি মূলত ভাসমান ক্রেন (ফ্লোটিং ক্রেন)। এটা কোস্ট গার্ডের নিজস্ব প্রথম ভাসমান ক্রেন। এর আগে আমাদের প্রয়োজন পড়লে নৌবাহিনী অথবা অন্য কারোর কাছ থেকে নিয়ে আসতে হতো। এই ক্রেনটি নিজ থেকে উপরে ৭০ টন ওজনের জাহাজ বা যে কোনো পণ্য লম্বালম্বিভাবে ওঠাতে ও নামাতে পারে। সমান্তরালে ৩০ মিটার প্রসারিত অবস্থায় ১২ টন লোড নিতে পারবে। নদীপথে বাংলাদেশে এটা সবচেয়ে উন্নত ভাসমান ক্রেন। এই ক্রেনটি দিয়ে দুর্ঘটনায় কবলিত ডুবে যাওয়া জাহাজ ও নৌকা উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত হবে।
তিনি বলেন, বিসিজিএফসি শক্তি জাহাজটির ক্রেনের অংশ ইতালির হেইলা কোম্পানি থেকে আমদানি করা হয়। জাহাজের বাকি অংশ দেশে তৈরি করা হয়। আমাদের এই জাহাজগুলো খুবই অত্যাধুনিক। ১৯৯৫ সালে আমরা যে জাহাজগুলো নিয়ে শুরু করেছিলাম সেগুলা ছিল নৌবাহিনীর পুরোনো জাহাজ। আমরা যে জাহাজগুলো পেয়েছি সেগুলো মেশিনারিগুলো অত্যাধুনিক। অত্যাধুনিক মেশিনারিজ, সেন্সর, সার্ভেলেন্স রেডার, নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে। এ কামানগুলো দ্বারা আমাদের নিজেদের রক্ষা এবং অপারেশনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারব।
কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই নিজস্ব সমুদ্র এলাকা দাবি সম্বলিত ‘দ্য টেরোরিস্ট ওয়াটার্স অ্যান্ড ম্যারিটাইম যোজন অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণীত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠার সোপান রচনা করেন। ১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল উত্থাপন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এ বাহিনীতে নতুন নতুন প্লাটফর্ম ও অবকাঠামো সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে বাহিনীর অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে ব্যাপক গতি সঞ্চার হয়েছে ও অর্জিত হয়েছে নানা সাফল্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলেন বিসিজিএস জয় বাংলা জাহাজের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিয়া উদ্দিন (সি) বিএন বলেন, আমাদের সার্ভেলেন্স রেডারের রেঞ্জ হচ্ছে ৯৬ নটিক্যাল মাইল। এই রেঞ্জের মধ্যে কোনো জাহাজ ও কোনো শত্রু আসলে আমরা চিহ্নিত করতে পারব। এই জাহাজগুলো উচ্চগতি সম্পন্ন। আমাদের জাহাজগুলো সেভাবে ডিজাইন করা। আমরা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে পারি। বাণিজ্যিক জাহাজের গতি এর চাইতে বেশি হয় না। যারা অপরাধ করে কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকে তারা আমাদের সঙ্গে পারবে না।
তিনি বলেন, আমাদের এই জাহাজগুলো খুবই অত্যাধুনিক। ১৯৯৫ সালে আমরা যে জাহাজগুলো নিয়ে শুরু করেছিলাম সেগুলা ছিল নৌবাহিনীর পুরোনো জাহাজ। আমরা যে জাহাজগুলো পেয়েছি সেগুলো মেশিনারিগুলো অত্যাধুনিক। অত্যাধুনিক মেশিনারিজ, সেন্সর, সার্ভেলেন্স রেডার, নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে। এ কামানগুলো দ্বারা আমাদের নিজেদের রক্ষা ও অপারেশনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারব।