কাঁচামরিচের দাম কমতে শুরু করেছে

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ভারত থেকে আমদানির কাঁচামরিচ দেশের বাজারে আসার পর সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে দাম। রবিবার থেকেই দেশে ভারতীয় মরিচ আসতে শুরু করেছে। আজ সোমবারও তা অব্যাহত থাকবে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদের পর ভারত থেকে ৫৫ টন কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়েছে। মূলত ভারতীয় মরিচের আমদানি ও বৃষ্টির কারণে দেশের মরিচ গাছে ফুল আসায় আগামীতে উৎপাদন বাড়বে এমন আশাবাদেই ক্রেতাদের নাগালে আসতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঈদের ছুটির পর রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৫৫ টন কাঁচামরিচ দেশে এসেছে, রাতে আরও আসবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দেশে এসেছে মোট ৯৩ টন। এছাড়া, ৯ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির বিপরীতে দেশে এসেছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টন।

একদিনের ব্যবধানে রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ জেলার কাঁচাবাজারে মরিচের দাম কেজিতে কমেছে ১শ’ টাকার বেশি। কোনো কোনো জেলায় একদিনে মরিচের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঝিনাইদহে মরিচের দর এক হাজার টাকা থেকে কমে ৫শ’ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

শনিবার থেকে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে তবুও ৪৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়। যা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে প্রতিকেজি আলু ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রবিবার নগরীর আগারগাঁও ও বিএনপি বাজারসহ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শনিবারের চেয়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম ১২০ টাকা কমেছে। বিএনপি বাজারে সবজি বিক্রেতা বাচ্চু শিকদার বলেন, শনিবার কাঁচামরিচ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। তবে রবিবারে ৪৮০ টাকা। পাইকারি বাজারে কমছে। আলু ও বেগুনের দাম বাড়তি।

হিলি ॥ দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, হাকিমপুরের হিলিতে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ১২০ টাকা কমেছে। একদিন আগেও ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আজ সোমবার থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্যটি আমদানি হতে পারে এমন খবরে দাম কমেছে। পুরোদমে মরিচ আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।

বগুড়ায় কেজিতে ৩০০ টাকা কমেছে মরিচের দাম। একদিন আগেও ৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ রবিবার বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজিতে। সবগুলো বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমবে বলে দাবি আমদানিকারকদের। এছাড়া দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ কাঁচামরিচ কম কিনছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

ভোমরা ॥ সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ছয় ট্রাক ভারতীয় কাঁচামরিচ বাংলাদেশে ঢুকেছে। রবিবার বেলা ১১টায় মরিচ ভর্তি ট্রাকগুলো ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছেন ভোমরা শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা।

ঈদের ছুটি শেষে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর রবিবার সকাল থেকে ফের শুরু হয়েছে। ভোমরা স্থল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে ২৭ জুন (মঙ্গলবার) থেকে শনিবার পর্যন্ত পাঁচদিন ছুটি ছিল ভোমরা স্থল বন্দরে। ফলে টানা পাঁচদিন বাংলাদেশ পারের ভোমরা স্থল বন্দরে কোনো আমদানি ও রপ্তানি হয়নি। তেমনি ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর থেকে আসেনি কোনো পণ্য।

রবিবার বেলা ১১টায় প্রথম পণ্য বোঝাই ট্রাক-লরি প্রবেশের পর থেকে ফের স্বাভাবিক আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় বন্দরে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ২১টি পাথর বোঝাই ট্রাক ও ৬টি কাঁচামরিচ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, ২৭ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি এবং ১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ঈদ উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর ২ জুলাই থেকে পূর্বের নিয়মে আমদানি রপ্তানি শুরু হয়েছে। রবিবার প্রথম চালানে ছয় ট্রাক কাঁচামরিচ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।

কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। খরার কারণে এবার কাঁচামরিচের ফলন কম হয়েছে। তাই দামও এখন অস্বাভাবিক। তবে বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর গাছ সতেজ হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে জোয়ারও (ফুল) আসতেছে। এই ফলনটা ওঠা শুরু করলে দাম কমে যাবে। সেটাও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে।

ঝিনাইদহ ॥ একদিনের ব্যবধানে জেলায় প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম হাজার টাকা থেকে নেমে এসছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায়। যদিও একদিন আগে শনিবার সকালে এই মরিচ এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল শৈলকুপায়। এদিকে হঠাৎ করেই মরিচের এমন দাম এভাবে উঠা নামায় বাজারে এসে বিপাকে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ঝিনাইদহে কাঁচামরিচের কোনো ঘাটতি নেই।

বাজারে এখন আলোচনায় রয়েছে কাঁচামরিচ। হঠাৎ করে কাঁচামরিচের দাম এক লাফে হাজার টাকা কেজিতে পৌঁছে যায় শনিবার। রবিবার আবার প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকায়। এ যেন মরিচের পাগলা বাজার। শনিবার শৈলকুপা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচের দাম এক কেজি হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। দাম কমে জেলার ৬ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে এখন কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা কেজি দরে।

ভারত থেকে আমদানির খবরে ফরিদপুরে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে কাঁচামরিচের দাম। খুচরা দরে ৮০০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ একদিনের ব্যবধানে কমে রবিবার ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার এই মরিচই খুচরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

রবিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার বাজারগুলোতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর আগে শনিবার (১ জুলাই) খুচরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় কাঁচামরিচ।

জানা গেছে, খরায় ফলন কম আসায় ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে কাঁচামরিচ সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় খুচরা বাজারে মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রবিবার উপজেলার চান্দাইকোনা, নিমগাছি, সলঙ্গা, পাঙ্গাসী ও ধানগড়া বাজারে এ দামে মরিচ বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় হঠাৎ দাম বেড়ে যায় বলে জানান পাইকার ও মরিচ চাষিরা। তবে মধ্য স্বত্বভোগীদের কারণে মরিচের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি ক্রেতাদের।

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রবিবার ভারত থেকে ৪টি ভারতীয় ট্রাকে ৩০ টন কাঁচামরিচ এসেছে। আমদানি করা এই কাঁচামরিচ খালাসের পর তা চলে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশে কাঁচামরিচের বাজার স্বাভাবিক রাখতে এই মরিচ আমদানি করা হয়। রবিবার বিকেলে কাঁচামরিচের দুটি চালান বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএস ঊষা ট্রেডিং ২০ টন এবং খুলনার এসএম করপোরেশন নামের অপর আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১০ টন মরিচ আমদানি করেন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন প্রতি কেজি কাঁচামরিচের জন্য শূন্য দশমিক ২১৫ মার্কিন ডলারে এলসি খোলা হয়েছে। কাস্টমসের শুল্ক করাদি পরিশোধের পর এই কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৫৬ টাকা দর পড়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন দেশের বাজারে কাঁচামরিচের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এই মরিচ আমদানি করেছেন। পর্যায়ক্রমে আরও কাঁচামরিচ আমদানি হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বন্দরে এই কাঁচামরিচ প্রবেশের পর তা দ্রুত খালাস করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ভারত থেকে আরও মরিচ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা।

কাঁচামরিচ
Comments (0)
Add Comment