বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্রিকসের উদ্যোগে স্থাপিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যোগ দেওয়ার চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ শীর্ষক চুক্তির এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্যান্য আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকগুলোর প্যারালাল আরেকটি ব্যাংক করা হচ্ছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকটি করা হচ্ছে। বিকল্প মুদ্রার মাধ্যমে যেন কাজ করতে পারে, সেটি নিয়েও তারা কাজ করছে। আমরা এই ব্যাংকের সদস্য পদ ও শেয়ার নিয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আরো নিবিড় করতে চাই।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ২০১৪ সালে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংক করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাজারব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাণিজ্য এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। আটটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এই ব্যাংকে অংশগ্রহণ করেছে। সেই চুক্তি অনুসমর্থন করার প্রয়োজন ছিল, গতকাল মন্ত্রিসভা ওই চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার চুক্তি অনুমোদিত হওয়ায় কী সুবিধা পাওয়া যাবে—সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্প আছে, ৬০০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প পাইলাইনে আছে। ওই প্রকল্পগুলো পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্রিকসে চাঁদা দেয় জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কিন্তু তার থেকে কয়েক গুণ বেশি অর্থায়ন আমরা পাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো দাতা সংস্থা জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় না। এই ব্যাংকে সে বিষয়ে বিধি-নিষেধ নেই।
তারা এখানে অর্থায়ন করছে। অর্থায়নের জন্য আমাদের প্রকল্প বাছাই করছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প পাইপলাইনে আছে। ওই দুটি প্রকল্পে এই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে।’
ট্যারিফ পলিসির খসড়া অনুমোদন । গতকাল ‘ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি, ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘আমাদের ট্যারিফ কমিশন আছে। তারা এসংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই পরামর্শ প্রক্রিয়ায় আমাদের নির্দিষ্ট কোনো পলিসি ছিল না। আমরা এত দিন যে কাজগুলো করেছি, সেটা সময় সময় সরকারের যে বাণিজ্যনীতি, রপ্তানিনীতি, শিল্পনীতি বা আমদানিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পায়নকে সহায়তা করে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বাজারে যাতে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরিতে যেন সহায়তা করতে পারে, সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ট্যারিফ পলিসির একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ট্যারিফ পলিসিতে ১৭টির মতো নীতি রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মনিটরিং ও অডিট কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ১৬ সদস্যের কমিটিতে একজন সচিব, এফবিসিসিআইয়ের একজন্য সদস্য, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান রয়েছেন, তাঁরা মনিটরিংয়ের কাজটি করবেন।
দুই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইন সংশোধন করে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর করা হচ্ছে। সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বঙ্গমাতা শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করার খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী, সিলেটে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আইন সংশোধন করে চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার শব্দগুলোর পরিবর্তে আচার্য, উপাচার্য বা উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় মহাহিসাব নিরীক্ষকে দিয়ে নিরীক্ষা করার বিষয়টিও আইনে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।
মহাহিসাব নিরীক্ষককে দিয়ে বিএসএমএমইউয়ের ব্যয় নিরীক্ষার সুযোগ রেখে ওই আইনও সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। সে জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন করা হয়েছিল।
তিন মাসে মন্ত্রিসভার ৬৫ সিদ্ধান্তের ৩৪টি বাস্তবায়িত । চলতি বছরের এপ্রিল-জুন মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেওয়া ৬৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৩৪টি বাস্তবায়িত হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভার মোট পাঁচটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৬৫টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর বাস্তবায়িত হয় ৩৪টি। এ সময়ের মধ্যে দুটি নীতি/কর্মকৌশল, ছয়টি চুক্তি/প্রটোকল অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া সংসদে পাঁচটি আইন পাস করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে জেলা (চট্টগ্রাম পাবর্ত্য জেলাগুলো বলবৎকরণ) আইন-২০২৩-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত এবং বাংলাদেশ পুলিশ (অধস্তন কর্মচারী) কল্যাণ তহবিল আইন-২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।