বে-টার্মিনালে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের পর সরকারের দৃষ্টি এবার গুরুত্বপূর্ণ আরেক প্রকল্প চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের লক্ষ্যে ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বে-টার্মিনালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। এ বিষয়ে আলোচনা করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক করার কথা রয়েছে সংস্থাটির।

বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিন-কে জানান, বিশ্বব্যাংক প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে এই প্রকল্পে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা করে এরই মধ্যে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার মতো গভীর সমুদ্র বন্দরের উপযোগী জাহাজ ভিড়তে পারবে এই টার্মিনালে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টিইইউএস কনটেইনারবাহী ফিডার জাহাজ ভিড়তে পারে, বে-টার্মিনাল নির্মাণের পর সেখানে ৫ হাজার কনটেইনারবাহী আরও বড় জাহাজ ভিড়তে সক্ষম হবে। আবার খোলা পণ্যবাহী বড় জাহাজও ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার পর্যন্ত লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। জাহাজের আসা-যাওয়া আবার জোয়ারের সময়ের ওপর নির্ভরশীল। বে-টার্মিনালে জোয়ার ও ভাটায় ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল, ভিড়ানো ও ঘোরানো সম্ভব হবে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর এলাকার সাগর উপকূলে ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্রে জেগে ওঠা আরও ১ হাজার ৬০০ একরসহ ২ হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় পাঁচ গুণ। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান কার্যক্রম চলে সাড়ে চার শ একর ভূমিতে। ওই বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি এলাকায় বে-টার্মিনালের কার্যক্রম চলবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কে এস কনসালটেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। ওই সমীক্ষায় প্রকল্পটিতে মোট তিনটি টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল ও তৃতীয় পর্যায়ে ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল ড্রেজিং। আর এই কাজটি সম্পন্ন করতেই ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। জানা গেছে, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান, ডিটেইল ড্রয়িং, ডিজাইন ও নির্মাণকাজ সুপারভিশন করতে কোরিয়ান দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডাইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। মতামতের জন্য ওই মাস্টারপ্ল্যান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, এরই মধ্যে চ্যানেল ড্রেজিংয়ের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খুব শিগগিরই প্রকল্প নির্মাণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করবে।

বিশ্বব্যাংক
Comments (0)
Add Comment