বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আয় বেড়েছে দেড়গুণ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরে ভোমরা স্থলবন্দরের জন্য এখনো পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি। তবে গত অর্থবছরের প্রথম মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ১৬ কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আয় বেড়েছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর ভোমরা স্থলবন্দরের জন্য এখন পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা এখনো নির্ধারণ করেনি। তবে অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এ বন্দরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬০ কোটি টাকার বেশি, যা গত অর্থবছরের প্রথম মাসের তুলনায় ১৬ কোটি টাকার বেশি। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছরের শুরুতেই পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়ায় রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এ বন্দরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব বেড়েছে ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকার বেশি।
এ ব্যাপারে ভোমরা বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন- এ বন্দরে অনেক বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব। শুধুমাত্র বৈষম্য, অবকাঠামো উন্নয়নের ধীর গতি ও বন্দরের তিনটি বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন- পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের প্রতিযোগিতা চলে শুরু থেকেই। বেনাপোলসহ অন্য বন্দরে ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় সেই তুলনায় ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ সুবিধা পায় না। পূর্বে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হতো না। ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করত। তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হতো। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এখন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করায় ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বেনাপোলে কাস্টম হাউস আছে। ভোমরা বন্দরে কাস্টমস হাউস না থাকায় খুলনা কমিশনার কর্তৃক পরিচালিত হয়। ফলে ডেপুটি কমিশনার দ্বারা পরিচালিত হওয়া ভোমরা বন্দর রাজস্ব আদায়ের ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা।
এ ব্যাপারে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ভোরের কাগজকে বলেন- এ বন্দরের রাজস্ব আয় দেশের অন্য যে কোনো বন্দরের চেয়ে বেশি হওয়া সম্ভব। তবে ব্যবসায়ীদের এ বন্দর দিয়ে সবধরনের পণ্য আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব দেশের অন্য যে কোনো বন্দরের তুলনায় কম। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। তাই এ স্থলবন্দর খুবই সম্ভাবনাময়। কিন্তু এ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সবধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন দেয়া হয় না। কী কারণে বা কার স্বার্থে ভোমরা বন্দরে এ বৈষম্য তা আমাদের বোধগম্য নয়। অথচ অনেক আগেই ভোমরা স্থলবন্দরকে দেশের পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তিনি অবিলম্বে ভোমরা বন্দরে পণ্য আমদানিতে বৈষম্য তুলে দিয়ে সবধরনের বৈধ পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ দিতে খুলনা কাস্টমস কমিশনার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরকে অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে সরকার সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তিনি বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ হবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন- প্রথম মাসে যে রাজস্ব আদায় হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী। ভৌগলিক কারণে কোলকাতা থেকে ভোমরা ঘোজাডাঙ্গার দূরত্ব অনেক কম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো থাকায় এ বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোমরা কাস্টমসের উপকমিশনার এনামুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এনবিআর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর ভোমরা স্থলবন্দরের জন্য এখন পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি। এরপরও গত অর্থবছরের প্রথম মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আহরণের শুরুটা বেশ ভালো। আশা করা হচ্ছে আগামীতে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে। অর্থবছরের শুরুতেই পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়ায় আয় বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও গত অর্থবছরে প্রথম মাসে ঈদের ছুটি ছিল। এ বছর কোনো ছুটি না থাকায় রাজস্ব বাড়ার কারণ বলে মনে করেন তিনি।