বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চিন্তা করবেন না, নির্বাচন হলে আমরাই জিতব। তবে মাঝখানে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এটা একটা আশঙ্কার জায়গা।’
শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এবার আর কাউকে তুলে খাওয়াতে পারব না।
যারা প্রার্থী হবে তাদেরই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে। যারা ভোট আনতে পারবে তাদের মনোনয়ন দেব।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, রাজধানী ঢাকায় সংগঠন শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তাঁর সাংগঠনিক রিপোর্টে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কমিটি না থাকার বিষয় তুলে ধরেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি দ্রুত কমিটি গঠনের তাগিদ দেন। ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান করতে সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সভায় শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সরকারের উন্নয়ন প্রচারের তাগিদ দেন। এ সময় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এলাকায় গিয়ে উন্নয়ন প্রচার না করে দলের এমপিদের বিরুদ্ধে নানা কথাবার্তা বলবে, বিষোদগার করবে তাদের আমি মনোনয়ন দেব না। এমনকি তাদের দলে রাখা হবে কি না, সেটাও ভাবার বিষয়।
সুনামগঞ্জ জেলা কমিটিতে পুরনো নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেসা হক। এ সময় সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ত্যাগীদের বাদ দিয়ে শুধু টাকাওয়ালাদের কমিটিতে রাখা হয়? যাদের টাকা আছে তাদের কমিটিতে রাখতে হলে আগে দেখতে হবে সে পুরনো আওয়ামী লীগ কি না। ত্যাগীদের কমিটিতে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যখন আমাদের দলের নেতাদের কোনো টাকা ছিল না সেই সময় এই ত্যাগী নেতারাই দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। দল কিন্তু তখনো চলেছে। সুতরাং এদের মূল্যায়ন করতে হবে।’
গত ৬ আগস্ট দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় যেসব জায়গায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয় উঠে এসেছে তা দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিশেষ বর্ধিত সভায় ঘোষণা অনুসারে সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা, উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণাটি গতকাল অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রচারের অংশ হিসেবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জনসভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়
সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বিএনপি-জামায়াত চক্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, গ্রেনেড হামলাকারী, দশ ট্রাক আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন। বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে নেমেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষক ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
বিদেশি শক্তি সঙ্গে রয়েছে বিএনপির, এ দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে কোনো বিদেশি শক্তি নেই, কেননা লুটেরাদের পাশে কেউ থাকতে পারে না। তারা দাবি করে, তাদের আন্তর্জাতিক শক্তি আছে। আমরা জানতে চাই কোন শক্তি তাদের পাশে আছে? লুটেরাদের সঙ্গে কেউ থাকবে না।’
বিএনপির ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬-এর শাসনামলকে ‘অন্ধকার যুগ’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তারা ক্ষমতায় এলে দেশ আবার অন্ধকারের যুগে ফিরে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ পেছনের দিকে ধাবিত হয়।
তিনি ২০২৬ সাল নাগাদ দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে এই ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, শুধুমাত্র পাগল এবং শিশুরা নিরপেক্ষ।’ তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘বিএনপি কি তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য পাগল এবং শিশুদের খুঁজে বের করতে পেরেছে?’