বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রংপুরে পাইপলাইনের মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক আকারে সরবরাহ শুরু হতে ৫ থেকে ৬ মাস লাগবে।
জিটিসিএল জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ‘বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময়ের আগে মে মাসেই প্রকল্পের পুরো ১৫০ কিলোমিটার এলাকার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে জিটিসিএল। গত ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় রংপুর বিভাগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপনের অঙ্গীকার করেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার পর রংপুর বিভাগে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পে গতি বেড়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েকটি শিল্প-কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে চায় জিটিসিএল। যদিও রংপুর বিভাগে স্থাপিত সব শিল্প-কারখানা বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে কারখানাগুলোতে গ্যাস জেনারেটর না থাকায় গ্যাসের সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানি মিটারিং স্টেশন, ডিআরএস স্থাপনে বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি, জমি অধিগ্রহণ, ভূমির উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা ঠিকাদারও নিয়োগ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
‘বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আমিরুজ্জামান বলেন, আগামী মাসে পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনের মাধ্যমে দুয়েকটি কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে স্থাপিত পাইপলাইনের কোনো ত্রুটি থাকলে সেটি চিহ্নিত করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে শিল্প-কারখানায় গ্যাসচালিত জেনারেটর নেই। এক মাসের মধ্যে হয়তো গ্যাস জেনারেটর রয়েছে এমন শিল্প-কারখানা পাব বলে আশা করছি।
প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের ১৫০ কিলোমিটার এলাকায় পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মিটারিং স্টেশন, ডিআরএস স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম বলেন, বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আমরা পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাস বিতরণ কার্যক্রমে রয়েছি। গ্যাস বিতরণ কার্যক্রমে আমাদের প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গ্যাস বিতরণের জন্য মিটারিং স্টেশন, ডিআরএস স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে। এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুসারে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকা কিংবা শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে পারব। এতে করে উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্প গড়ে ওঠার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
জিটিসিএলের তথ্যমতে, দেশের উত্তর জনপদে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাণিজ্যিক ও অন্যান্য গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১ হাজার পিএসআইজির ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন এবং আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ‘বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি সরকারি ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবান করছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের জন্য ৩০৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া হুকুম দখল করা হয়েছে ৫৭৬ দশমিক ৩৭ একর জমি। ৩০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন পাড়ি দিয়েছে ৬টি নদী ও ২টি খাল। এসব নদী ও খালের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ইপিসি ভিত্তিতে সৈয়দপুরে ১০০ এমএমএসসিএফডি (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট পার ডে) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সিজিএস (সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই), রংপুরে ৫০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টিবিএস (টাউন বর্ডার স্টেশন) এবং পীরগঞ্জে ২০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টিবিএস স্থাপন করা হচ্ছে।
রংপুর বিভাগে গ্যাস সরবরাহ করা হলে স্থানীয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী কৃষিভিত্তিকসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের শিল্প-কারখানা গড়ে তুলবেন। এতে করে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পাল্টে যাবে। গ্যাস সরবরাহের ফলে নতুন শিল্প-কারখানা ও বিসিক এলাকার শিল্প-কারখানার পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে। ফলে রংপুরের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে।