বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতি মে. টন গমের দাম ৩০৪.৮৩ ডলার হিসাবে এতে মোট ব্যয় হবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৩ টাকার কিছু বেশি। সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এই গম সরবরাহ করবে।
এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে আমদানির জন্য ছয় লাখ মে. টন গমের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়। সে অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট তারিখে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৫০ হাজার মে. টন গম ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাজেটে গম আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদফতর আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। নির্ধারিত সময়ে মোট ১০টি শিডিউল বিক্রি হয়। এর মধ্যে চারটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারটি দরপত্রই রেসপন্সিভ ঘোষণা করে।
সূত্র জানায়, দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি মে. টন গমের দাম ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। অন্য তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স সিরিঅ্যাল করপস ট্রেডিং এলএলসি প্রতি মে. টনের দাম ৩০৯.০০ ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স গ্রেইন ফ্লাওয়ার ডিএমসিসি ৩১৩.০০ মার্কিন ডলার এবং সুইজারল্যান্ডের মেসার্স অ্যাসটন অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসএ প্রতি মে. টন গমের দাম ৩২২.২২ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে।
সূত্র জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বিদ্যমান বাজারমূল্যের গ্রহণযোগ্য মাত্রার সাথে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরের সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত অ্যাগ্রিমার্কেট উইকলি ইনডেক্স ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ এফওবি দরের সাথে জাহাজ ভাড়াসহ অন্যান্য সম্ভাব্য আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া দরের সাথে প্রাক্কলিত বাজারমূল্যের তালিকা করে। এতে রাশিয়া থেকে প্রতি মে. টন ৩০৫.০৮ মার্কিন ডলার, ইউক্রেন থেকে ২৬৬.৬৬ মার্কিন ডলার, ফ্রান্স থেকে ৩১৩.৯৯ মার্কিন ডলার, আর্জেন্টিনা থেকে ৩৯৭.২৫ মার্কিন ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩৩৩.৮৭ মার্কিন ডলার, কানাডা থেকে ৪০৪.৪০ মার্কিন ডলার এবং আমেরিকা থেকে ৪০৭.৪৫ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কোটেশনে অংশগ্রহণকারী চারটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য দরদাতা ঘোষণা করে। গ্রহণযোগ্য দরদাতাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক দাখিল করা দরপত্র ৫০ হাজার মে. টন গমের জন্য উদ্ধৃত দর প্রতি মে. টন ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার, যা উপরে উল্লিøখিত দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইউক্রেন ছাড়া গম রফতানিকারক প্রায় সব দেশের বাজারদর প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরের তুলনায় বেশি। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসঙ্কট, কষ্ণসাগর দিয়ে বহুল আলোচিত শস্যচুক্তি গত ১৭ জুলাই তারিখের পর নবায়ন হওয়ায় এবং খাদ্যশস্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মে. টন ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৩৩.৩৭৮৮ টাকা) গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে। সেই হিসাবে ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হবে এক কোটি ৫২ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি অনুয়ায়ী গমের বর্তমান মজুদ দুই লাখ ১৩ হাজার মে. টন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকারি বিতরণ খাতে ছয় লাখ ৭২ হাজার মে. টন এবং নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে দুই লাখ ৫০ হাজার মে. টনসহ মোট ৯ লাখ ২২ হাজার মে. টন গম প্রয়োজন হবে। খাদ্য বিভাগের ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উৎস থেকে আমদানির জন্য নির্ধারিত পরিমাণ ছয় লাখ মে. টন। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানি করা হয়েছে। অবশিষ্ট পাঁচ লাখ ৫০ হাজার মে. টনের মধ্যে প্যাকেজ-২-এর আওতায় ৫০ হাজার মে. টন আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে প্রতি মে. টন গমের দাম পড়বে ৩০৪.৮৩ ডলার। এর আগের প্যাকেজ-১-এর আওতায় আমদানি করা প্রতি মে. টন গমের দাম পড়েছে ২৯৭.৪৭ ডলার। অর্থাৎ প্যাকেজ-১-এর চেয়ে প্যাকেজ-২-এর প্রতি মে. টন গম আমদানি করতে ৭.৩৬ ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে।