বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পর্যটন নগরী কক্সবাজার। দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটক ভ্রমণ করলেও জেলাটিতে ছিল না রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা। সেই অপেক্ষা এবার ফুরাচ্ছে। দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলায় শিগগিরই চালু হচ্ছে রেল। সেপ্টেম্বরেই হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল রান।

কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আরো কয়েকটি মেগা প্রকল্প। প্রকল্পগুলো এই জেলায় হলেও এর সুফল পাবে পুরো দেশ। সাগরের বুকে বিমানবন্দরে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরই সমুদ্র ছুঁয়ে ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ। পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে হচ্ছে তেল পরিবহনের জন্য ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। প্রকল্পটি চালু হলে জ্বালানি তেল খালাসে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

এ দিকে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে মাতারবাড়ীর কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এশিয়ান হাব হিসেবে জাহাজগুলোর জন্য যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে বন্দরটি পরিচিতি পাবে। এতে মহেশখালী দ্বীপ পরিণত হবে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক জোনে। এ ছাড়া বন্দরের উপকূল ঘেঁষেই মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে।

এর বাইরে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজার, সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র, মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপনের মতো প্রকল্পের মধ্য দিয়ে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।

২০১০ সালে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচলের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু হবে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ
ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পথে রেলস্টেশন থাকছে ৯টি। পুরো প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩৯১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় নির্মিত হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে যেখানে সময় লাগে সাড়ে ১১ ঘণ্টা, ট্রেনে পৌঁছাতে সেখানে লাগবে মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টা। কমে আসবে পরিবহন ব্যয়ও। চলতি বছরেই চালু হবে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল। আর এর মাধ্যমেই খুলতে যাচ্ছে রেলের দক্ষিণের দুয়ার।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতের তীর ঘেঁষে চলছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। সমুদ্রের জলরাশির ওপর রানওয়ের এক প্রান্ত থাকবে। দিনরাত সাগরজল ছুঁয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করবে এই রানওয়েতে। রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হলে অনেকটা ভাসমান রানওয়েতে নামবেন বিমানে আসা যাত্রীরা। অবতরণের সময় যাত্রীদের মনে হবে, যেন সাগরেই নামতে যাচ্ছেন তারা। এমন ব্যতিক্রম অনুভূতি দেয়ার পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে এই বিমানবন্দর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিমানের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সবাই দুবাইকে গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও ২০০ ফুট বড় রানওয়ে সমৃদ্ধ কক্সবাজার বিমানবন্দর আগামীতে আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং হাব হবে। রানওয়ে পরিষেবা চালু হলে বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৪৭-এর মতো বড় বিমানগুলো কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হবে।

মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। যেখানে প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে। আরো ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। কয়লা পরিবহনের জাহাজ জেটিতে আসার পরিকল্পনা থেকেই মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করে এশিয়ান হাব হিসেবে জাহাজগুলোর জন্য যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে বন্দরটি পরিচিতি পাবে। এতে মহেশখালী দ্বীপ পরিণত হবে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক জোন।

এক সময় যেটি ছিল অনেকটা অসম্ভব কাজ, এখন তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামোর কাজ। ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার বন্দর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এটি চালু হলে মাতারবাড়ীতে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজও ভিড়তে পারবে, যা এশিয়ার এ অঞ্চলে প্রথম।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বাসস্থান তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার। ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর জমির এই প্রকল্পটিতে এক হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনে রয়েছে ৩২টি করে ফ্ল্যাট, প্রত্যেক ফ্ল্যাটে থাকবে একটি করে পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন (মোট ব্যবহারযোগ্য) ৪০৬ দশমিক ৭ বর্গফুট, প্রতিটি তলায় রয়েছে কমন সার্ভিস সুবিধা।

সম্প্রতি সময়ের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া উপজেলা। তার মধ্যে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকায় রেললাইনের পাথর ও মাটি সরে বসে গেছে রেললাইন। চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় ভারি বৃষ্টির সময় তীব্র পাহাড়ি ঢলে পাথর ও মাটি সরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নির্মাণাধীন রেললাইনের কিছু অংশ দেবে গেছে; কোথাও কোথাও লাইন বেঁকেও গেছে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এডিবির অর্থায়নে তৈরি করা এ রেললাইন নির্মাণের আগে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সমীক্ষা করানো হয়েছিল। তারা যেভাবে বলেছে, সেভাবেই রেললাইন বসানো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সংস্কার করবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো ছিল ফসলি বিল। প্রতি বছর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ভাটি এলাকা সাতকানিয়া, দোহাজারি, চন্দনাইশ উপজেলায় পানির ঢল নামে, যে পানি বিল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু নতুন বসানো রেললাইনে পানি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট তৈরি না করায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এ মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান এলাকায় হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব বলছে, চট্টগ্রাম বিভাগে আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৩০ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এর কয়েক গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় এই দুর্ভোগ বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা অনেক কালভার্ট, ব্রিজ, বক্স কালভার্ট রেখেছে রেললাইনে। তাই এ অ্যালাইনমেন্ট প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করেছে কি না, করলে কতটুকু করেছে, সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।’ বন্যার সময়টিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের দিকটি দেখিয়ে অধ্যাপক রাশিদুল বলেন, ‘অস্বাভাবিক বৃষ্টির সাথে ছিল সাগরে জোয়ার। এমনও হতে পারে শুধু রেললাইন না, অতিরিক্ত বৃষ্টির সাথে জোয়ারের কারণে পানি বের হতে পারেনি।’

কক্সবাজার
Comments (0)
Add Comment