বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানীর চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বৃক্ষরোপণ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ চলছে
ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণরোধে ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া নদী দূষণরোধে বর্জ্যরে উৎসমুখ বন্ধ করা হবে। বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণ ও দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশের নদ-নদী দখলমুক্ত রাখতে ও তীরভূমির সৌন্দর্য্য বর্ধনে ৫০ হাজারের অধিক বৃক্ষরোপণ করবে সরকার। এর মধ্যে চলতি মাসেই নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা ও চাঁদপুরসহ দেশের ১৯টি নদী বন্দরে ৬ হাজারের অধিক বৃক্ষরোপণ করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো বেদখল থেকে রক্ষা এবং তীরভূমির সৌন্দর্য্য বর্ধনের ৪৬ হাজার বৃক্ষরোপণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। ২০২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রী নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ৫৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় ৫৭৭ দশমিক ৫৪ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। তাই উদ্ধারকৃত নদী এই তীরভূমিতে নারিকেল, কৃষ্ণচূড়া, নিম, আকাশমনি, অর্জুন, চালতা ও মেহগনি গাছের চারা রোপণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে তুরাগ নদীর তীরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) পাঁচ হাজার বৃক্ষের চারা রোপণ করা হবে।
আজ রবিবার বিকেল চারটায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যানের প্রধান সড়কের শেষপ্রান্তের তুরাগ নদীর তীরে বৃক্ষরোপণ করবেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার নৌ-পথে দুই পাশে নদীর তীরে এই ফলজ, বনজ, ভেষজ ও ফুলের গাছ লাগানো হবে। নদীপাড়ে এই সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত এই বনায়ন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। চারপাশের নদীর তীরে ওয়াকওয়ে বনায়ন কার্যক্রম অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ঢাকার চারপাশে সব মিলে প্রায় ৪৬ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে।’ সারাদেশের ১৯ নদী বন্দরে ছয় হাজার ৮৯ টি চারা রোপণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নদী বন্দর এলাকায় ও তীরভূমিতে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ঢাকা নদী বন্দরে ৪৫০০, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে ১০০টি, বরিশাল নদী বন্দরে ৫০টি, খুলনা নদী বন্দরে ৭০টি, নওয়াপাড়া বন্দরে ৭০টি, চাঁদপুর নদী বন্দরে ৩৫টি, টঙ্গী নদী বন্দরে ৩৫টি, আরিচা বন্দরে ১১৯টি, নগরবাড়ী-কাজিরহাট-নরাদহ বন্দরে ১০০টি, ভোলা বন্দরে ৪০টি, পটুয়াখালী বন্দরে ৩০টি, বরগুনা বন্দরে ৫০টি, মেঘনা বন্দরে ৫০টি, ঘোড়াশাল বন্দরে ৩০০টি, আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার বন্দরে ৪৫টি, সুনামগঞ্জ বন্দরে ৩০০টি, বাঘাবাড়ী বন্দরে ৪০টি, শিমুলিয়া বন্দরে ১২০টি ও চট্টগ্রাম দপ্তরে ৩৫টি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। রোপণকৃত বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে, নারিকেল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, নিম, আকাশমনি, অর্জুন, চালতা, মেহগনি, চালতা, কামিনী, আমড়া, আম, চেরিফল, রাধাচূড়া, বন্দর বকুল, কাঁঠাল, বেল, তাল, জাম, তেতুল, নীল পারুল, আমলকী, বহেড়া, পাম, সুপারি, জলপাই, শরিফা, সফেদা, পেয়ারা, জামরুল, জাম্বুরা, খেজুর, বট ও কাঠবাদাম গাছ।
নদী রক্ষায় ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা ॥ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির জন্য প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানটি ৩টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। দূষণ, দখল এবং নাব্য। মাস্টারপ্ল্যানটি ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, দখল এবং নাব্য প্রতিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের শাখা নদী, খালগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি, ‘নদী দূষণ প্রতিরোধ কমিটির’ প্রতিবেদন বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চলমান বর্তমান প্রজেক্টসমূহ পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করা হয়। দূষণ, দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধিকল্পে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে চারটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ক্র্যাশ প্রোগ্রাম (১ বছর), স্বল্প মেয়াদি (৩ বছর), মধ্য মেয়াদি (৫ বছর) এবং দীর্ঘ মেয়াদি (১০ বছর)। মাস্টারপ্ল্যানে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য নদী রক্ষার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে।
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, নদীর রক্ষার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রী নদীর দুই তীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচটি নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ৫৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ৫৭৭ দশমিক ৫৪ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত নদীর তীরে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার সীমানা পিলার স্থাপন, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ৩টি ইকোপার্ক ও ১৪ জেটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অধীনে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হবে। বিনোদনের জন্য ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সিন্নিরটেক এবং তুরাগ নদীর তীরে আশুলিয়া ও টঙ্গীতে। প্রকল্পে মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু তা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ৮০টি, কি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ কিলোমিটার, হাঁটার সেতু ৩৯৫ মিটার, নদী তীরে বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে ২৯১টি, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে ৮৫০ মিটার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ৩ কিলোমিটার ৫০০ মিটার, জেটি নির্মাণ ১৪টি ও ২৩০০০ বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পে সার্বিক ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।