বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির গতি বেড়েছে বহুগুণ। গত বছরের আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজারে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোটা পাওয়া ৪ লাখ ৫৭ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪ লাখের বেশি পাঠানো সম্ভব হবে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিকারক বলছেন, আগামী বছর আরও প্রায় ৪ লাখ কর্মীর কোটা পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ফলে আশা করা হচ্ছে চলতি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৮-৯ লাখ কর্মী পাঠানো হবে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট মালয়েশিয়ায় প্রথম ব্যাচের ৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী যান। প্রথম দিকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে ধীরগতি থাকলেও গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ শ্রমবাজারে গতি আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, আগের চেয়ে এবারের অভিবাসন প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল হওয়ায় কর্মস্থলে সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেক কম। এখন মালয়েশিয়া বাংলাদেশি কর্মীরা মূল বেতন পাচ্ছেন ১৫০০ রিঙ্গিত ও সঙ্গে যোগ হচ্ছে ওভারটাইম। সব মিলিয়ে কর্মীরা ৫০ হাজার টাকার মতো বেতন পাচ্ছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শ্রমবাজারগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার আগের সরকারের নীতির আলোকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। যা বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ ইতিবাচক দিক। এরই ফলশ্রুতিতে আগামী বছরের শুরুতে উল্লেখসংখ্যক নতুন কোটা বরাদ্দ হবে বলে অনেকটা নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। জানা যায়, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকার বছর দুয়েক আগে আইটি বেইজড রিক্রুটিং সিস্টেম চালু করেছে। সীমিতসংখ্যক নির্ভরযোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের নীতি নেয় দেশটি।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে এফডব্লিউসিএমএস (ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) এর আওতায় সব ধরনের কর্মী নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। মালয়েশিয়া সরকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বিভিন্ন দেশকে অটোমেটিক সিস্টেমে কোটা বরাদ্দ করেছে। ভিজিট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে সেদেশের ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করার পন্থা বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে। এফডব্লিউসিএমএস-এর সরবরাহকারী সংস্থার ঢাকাস্থ অফিস মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট ফ্যাসেলিটেশন সেন্টার বা এমইএফসি এর মাধ্যমে শুধু কর্মীদের ই-ভিসা প্রসেস করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা পাওয়া বিআরএগুলো নিয়োগকর্তা কর্তৃক পুনঃপুন তাদের স্থানীয় এজেন্ট পরিবর্তনের বিষয়টি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানান, কর্মীরা যেহেতু সরাসরি প্রধান বিআরএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেয়ে সাব-এজেন্ট বা পরিচিতজনের মাধ্যমে প্রধান বিআরএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা নিরাপদ ও সাবলীল মনে করে, পাশাপাশি সরকারিভাবে এমন কোনো পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি যাতে কর্মীরা সরাসরি প্রধান বিআরএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ফলে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াটি এখনো মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরশীল, এ কারণে অভিবাসন ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর মেডিকেল আনফিট বা অনিবার্য কারণবশত কোনো কর্মী দেশে ফিরে এলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের সম্পূর্ণ অভিবাসন ব্যয় ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।
সম্পূর্ণ বিনা খরচে সুযোগ পাবেন ২ হাজার বাংলাদেশি : এমপ্লয়মেন্ট পে-মডেলের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও সম্পূর্ণ বিনা খরচে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই কর্মসূচির আওতায় ২০০ কর্মীর ভিসার অনুমোদন পাওয়া গেছে। গত ১৯ জুন প্রথম ব্যাচ এবং গত ১৭ আগস্ট দ্বিতীয় ব্যাচে বিনা খরচে কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। তৃতীয় ব্যাচ সেপ্টেম্বরের শুরুতে মালয়েশিয়ায় যাবে। সম্পূর্ণ বিনা খরচের এই কর্মীদের নিজেদের কোনো টাকা দিতে হয় না। তাদের নিয়োগকারীরা ফ্লাইট টিকিট, ভিসা, মেডিকেল, ইনস্যুরেন্স, বিএমইটি ছাড়পত্রসহ অভিবাসন সংক্রান্ত সব ব্যয় বহন করে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণ বিনা খরচে অভিবাসন কর্মসূচির আওতায় কমপক্ষে ২ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠানো সম্ভব হবে।