পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে সৌদি আরবের কম্পানি

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব পাাচ্ছে সৌদি আরবভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সেপ্টেম্বরেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রেড সি গেটওয়ে নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি হবে। অক্টোবর থেকে তারা কাজ শুরু করতে পারে।

চুক্তি সম্পন্ন হলে দেশে এই প্রথম বিদেশি কোনো অপারেটর সমুদ্রবন্দরে টার্মিনাল পরিচালনার কাজ করবে।

নিজেদের অর্থে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে সেগুলো স্থাপন ও দক্ষ জনবল দিয়ে এই টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামা করবে প্রতিষ্ঠানটি।

 

রেড সি গেটওয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করে থাকে। জেদ্দা পোর্ট বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় ৪১তম।

চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম। রেড সি গেটওয়ে প্রস্তাবে বলা আছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি।

আর চুক্তির দিন থেকেই দিন গণনা শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট) গগন সেকসরিয়া তাঁদের ওয়েবসাইটে পিসিটি পরিচালনা নিয়ে লিখেছেন, ‘আমরা এই সুযোগের জন্য নির্বাচিত হয়ে আনন্দিত। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন দক্ষ লোকবল সক্ষমতা তৈরিতে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই প্রকল্পটি রেড সি গেটওয়ের দক্ষতা ও উদীয়মান বাজারের জন্য এর সম্প্রসারণ কৌশলের সঙ্গে ভালোভাবে যায়। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হব বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী।

’বিদেশি অপারেটর দিয়ে বন্দর পরিচালনার কাজটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি মাসে রেড সি গেটওয়ের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। অক্টোবর থেকে তারা কাজ শুরু করতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেড সির পরিচালনার প্রস্তাব জুলাইয়ে পিপিপির কাছে জমা পড়ে। কারিগরি ও আর্থিক দুই ধাপে সেই প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে কমিটি। মূল্যায়ন শেষ হতে সরকারি পিপিআর অনুযায়ী ১০ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু পিপিপিতে সেই সময় নির্ধারণ করা নেই। ওই সময়ের মধ্যেই মূল্যায়ন শেষ হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারব। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করতে পারবে। কিন্তু যন্ত্রপাতি সংযোজন করে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে আরো সময় লাগবে।’

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) দূরত্ব ছয় মিটার। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান এবং ড্রাফট সুবিধা বেশি থাকায় পিসিটি বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্যও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। দেড় বছর আগে থেকেই টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দরের জেটি, টার্মিনাল ও কার্গো পণ্য ওঠানামার জন্য এত দিন দেশীয় অপারেটররাই কাজ করত। কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় এর মধ্যে সক্ষমতা দেখিয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক। এই প্রথম বিদেশি অপারেটর আসার খবরে সক্ষমতা তুলনা করার সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে দেশীয় অপারেটরও আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে প্রতিযোগিতায় পড়বে।

তবে বিদেশি অপারেটররা বন্দর ব্যবহারের ভাড়া বাড়তি নিতে পারে বলে আলোচনা আছে। এক বিদেশি শিপিং লাইন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাড়তি ভাড়া নিলে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাড়া নির্ধারণ করবে চট্টগ্রাম বন্দরই। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে সার্ভে করেই ভাড়া নির্ধারিত হবে।

সৌদি
Comments (0)
Add Comment