বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য তিন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছায়নি।
জনগণ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে সেটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।’ আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০ লাখ জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
এতে চারটি ব্যাচে ১০০ জনকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ১২৮টি ব্যাচে তিন হাজার ২০০ জন প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। পরে এসব প্রশিক্ষক মাঠ পর্যায়ে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অন্য চার নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন ও তফসিল নিয়ে ইসি যা বলে আসছে :
কবে সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে, কবে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে—এসব প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনাররা বলে আসছিলেন চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৭ জুলাই একটি বেসরকারি টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সেপ্টেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।’ পরে ওই দিনই তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তখন (বেসরকারি টিভিকে টিভি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়) অনুমান করে বলেছি। এখন হিসাব করে বলছি, অক্টোবরের আগে তফসিল হওয়ার কথা না।
অক্টোবরেও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কমিশনে এখনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা আমার নিজের চিন্তা-ভাবনা।’ সিইসি ওই দিন আরো বলেছিলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আগে নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা হলেও এবার আরো সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।’
গতকাল নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, একেবারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে।’
সংবিধানে জাতীয় সংসদের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। নির্বাচন কমিশনের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনায় বলা আছে, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
খতিয়ে দেখা হচ্ছে আগের দুটি নির্বাচনের তফসিল : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে আগেরবারের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন। এসব বিষয় কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
গতবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৩ ডিসেম্বর। নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য সরকারবিরোধী জোট ও দলগুলোর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ এবং নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার অনিশ্চয়তার মধ্যে ওই তফসিল ঘোষণা করা হয়। সে সময় তফসিল পেছানোর দাবি উঠলে তৎকালীন সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের জন্য জানুয়ারি মাসটা নানা কারণে ডিস্টার্ব মাস। জানুয়ারি মাসে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমা হয়। ১৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ, র্যাব নিয়োগ করা হয়। আবার জানুয়ারির শুরু থেকে স্কুলগুলো খোলা থাকে। এ ছাড়া এ সময় অনেক শীত ও কুয়াশা থাকে। এ জন্য চর ও হাওর অঞ্চলে ঝুঁকি থাকে। এসব কারণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।’ ওই সময় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিল, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের কাছাকাছি সময়কে বাদ রেখে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করতে।
কিন্তু তার পরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি মেনে ওই বছরের ১২ নভেম্বর পুনর্নির্ধারিত তফসিল জারি করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়। তাতে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ওই সময়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা হলে ভোটগ্রহণের সময় আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল কমিশনের।
সিইসি যা বলেছেন : গতকাল প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে আমাদের সার্থকতা হবে। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে ক্রেডিবিলিটি। একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছায়নি। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে নির্বাচন নিয়ে হা-হুতাশ করতে হয় না। বিশেষ করে ইউরোপের অনেক দেশে নির্বাচনগুলো খুব শান্তিপূর্ণ হয়। ওরা গণতন্ত্রের একটা বিশেষ অবস্থানে গিয়ে থিতু হয়েছে।’ সিইসি বলেন, ‘জনগণ যখন সত্যিকার অর্থে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, সেটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’