বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের যে উন্নয়ন তা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল মন্তব্য করে এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান। জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সারা দেশের স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আট হাজারের মতো জনপ্রতিনিধি আমন্ত্রিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতি বিভাগ থেকে অন্তত তিনজন করে জনপ্রতিনিধির বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। সবার শেষে তিনি বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি, এখনো অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে।
সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেব। কারণ প্রতিটি গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ…আজকে যে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অভিযোগ দিয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের অর্থে করব, সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি।
পদ্মা রেললাইনও করে দিয়েছি। এখন আর যোগাযোগের অসুবিধা নেই।’ জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের উন্নয়নটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন আর নষ্ট না করতে পারে। কারণ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যতটা এগিয়েছিলাম, বিএনপি-জামায়াত জোট সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল।
২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উচ্চাসনে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হবে না, ব্যর্থ হতে দেব না।’
কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জনপ্রতিনিধিরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রতি একটু ভালোভাবে দৃষ্টি দেবেন। সেখানে বিনা পয়সায় ওষুধগুলো দেওয়া হচ্ছে কি না, মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে কি না। আশা করব আপনারা এদিকে একটু নজর দেবেন, যাতে করে মানুষ চিকিৎসাসেবা পায়।’
উপস্থিত স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা তৃণমূলের মানুষ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবায় নিয়োজিত। জনগণের জন্য কাজ করা এটা আপনার আমার সবারই দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনে করে আপনারা এগিয়ে যাবেন। কারণ একবার যখন আপনাকে ভোট দিয়েছে, তারা যেন আবার আপনাকে ভোট দিতে পারে, আপনাদেরও মানুষের সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর উপদ্রব। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সবারই কিছু করণীয় আছে। আপনারা নিশ্চয়ই যার যার নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারি ব্যবহার করতে হবে, নিজেদের সচেতন হতে হবে। শুধু মশা মেরেই শেষ করা যাবে না। নিজেদেরও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯-এ সরকারের গঠনের পর থেকে স্থানীয় সরকারকে যথেষ্ট অর্থ দিয়ে শক্তিশালী করেছি। বিএনপির আমলে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, আর এখন আমরা বরাদ্দ দিয়েছি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এতে আপনারাই কিন্তু লাভবান হবেন। আমি হয়েছি। দাদার কাছ থেকে জমি পেয়েছি, সেগুলোতে ধান চাষ করে দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা পেয়েছি। যারা চাষ করেছে তাদের দিয়ে-থুয়ে এই টাকা পেয়েছি।’
মানবপাচার, মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। গণভবনকে আসলেই গণভবন বলে মনে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।