বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বুধবার ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও সংবাদমাধ্যমটির বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকার বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার, সেটা আমরাই তো করেছি-আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কাজেই সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের কোনো স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই স্যাংশন কী কারণে?’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিয়েছে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
এছাড়া শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া…। তো ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জারি।’
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আবার তাকে জেলে যেতে হবে, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোনো দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদের যদি চাইতে হয়, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আমাদের আদালতের কাজের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তবে হ্যাঁ যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য, সেটা হচ্ছে, আমার যেটুকু সরকার হিসাবে ক্ষমতা আছে, সেখানে তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার পারমিশনটা দেওয়া হয়েছে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা…। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর যদি তাদের যেতে হয় বাইরে, তাহলে এখন যে তাকে আমি বাসায় থাকার পারমিশনটা দিয়েছি, এটা উইথড্রো (প্রত্যাহার) করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে। এবং কোর্টে যেতে হবে।
কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেন, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’ ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর ঘোষণা আসে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট শনিবার (লন্ডন সময়) সকাল ১১টা ৭ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। ফ্লাইটটি ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে (ওয়াশিংটন সময়) লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীকে তার বাসস্থল হোটেল তাজের সামনে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য (ইউকে) শাখা। হোটেলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাজিদুর রহমান ফারুক ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ার উজ জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, আলহাজ জালাল উদ্দিন, হরমুজ আলী, নঈম উদ্দিন রিয়াজ, মারুফ চৌধুরী, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, খালেদা কোরেশী ও শাহিন আক্তার প্রমুখ।