সুন্দরবনের উন্নয়নে প্রায় ২৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বর্তমানে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার ২৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশ, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, বিজ্ঞানভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সফলতা বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়৷

সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সবার এগিয়ে আসতে হবে। সুন্দরবনের গাছ, বাঘ, ডলফিন রক্ষার জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকারের মাধ্যমে গাছ কাটা, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। সুন্দরবনে মোট আয়তনের ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ রক্ষিত এলাকা থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার বন্য প্রাণীর প্রধান প্রজননকাল জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের বনজ দ্রব্য সংগ্রহ এবং পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ২০২১ সাল থেকে রাস মেলা বন্ধ করায় সুন্দরবনে এ সময় আগের মতো হরিণ শিকারের কোনও ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে বাঘ সংরক্ষণের বিষয়ে জানানো হয়, এই বন সংরক্ষণে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৮-২০২৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘ জরিপ, বাঘের শিকার বিষয়ক প্রাণী জরিপ, বাঘ মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের বেষ্টনী নির্মাণ, জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্য প্রাণীর আশ্রয়ের জন্য মাটির উঁচু টিলা নির্মাণসহ বাঘ সংক্রান্ত অন্যান্য গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে ডলফিন সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় ছয়টি ডলফিন অভয়ারণ্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনে বাঘ/কুমিরের আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

বলা হয়, সরকার সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে। জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৯৮ জন অপরাধীকে আটক এবং ১১৬৯টি ট্রিলার/জলযান জব্দ করা হয়েছে। জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে আগস্ট, ২০২৩ পর্যন্ত আট মাসে বিষ রাসায়নিক প্রয়োগে মাছ ধরার অভিযোগে ৮২ জন আসামিকে আটকসহ ১৭৩ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে ৭৩টি বন মামলা করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে আগস্ট, ২০২৩ পর্যন্ত হরিণ শিকারের অভিযোগে ৭৭ জন আসামিকে আটকসহ ১৯৯ জন আসামির বিরুদ্ধে ৫৪টি বন মামলা করা হয়েছে।

এদিকে সুন্দরবনে বিভিন্ন বন্য প্রাণী সুপেয় পানীয় জল সরবরাহের জন্য চারটি নতুন পুকুর খনন এবং ৮৪টি বিদ্যমান পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন ও এর বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ ও অহংকার। সুন্দরবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে বাড়ানো হচ্ছে।

সুন্দরবন
Comments (0)
Add Comment