বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বর্তমানে সরকার আমদানির পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে প্রায় এক ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আর তাই মেগা প্রকল্পে বিশ্বমানের পণ্য নিশ্চিত করার সুযোগ পাওয়ায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের নির্মাণসামগ্রী খাত। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্মত উপকরণ নিশ্চিতের পাশাপাশি পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা ও পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা উপকরণ যদি কোনোভাবে নিম্নমানের হয়, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির পথ বেছে নেবে।
জানা গেছে, ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য কমপক্ষে ১০টি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট, ইস্পাত ও পেইন্টের মতো উপকরণ সরবরাহ করছে। সেই হিসেবে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের একটি বড় অংশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজে অংশ নেয়া ১০ দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি সিমেন্ট, ২টি ইস্পাত ও বাকি পেইন্টগুলো ও পিভিসি পণ্য তৈরি করে। সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- শাহ সিমেন্ট লিমিটেড, ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সেভেন সার্কেল (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড।
বিএসআরএম ও জিপিএইচ ইস্পাত এই প্রকল্পে ইস্পাত সরবরাহ করছে এবং আরএফএল গ্রুপের ২ প্রতিষ্ঠান- আরএফএল পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস ও রেইনবো পেইন্টস প্রয়োজনীয় পাইপ ও রোড মার্কিং উপকরণ সরবরাহ করছে।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আমিরুল হক জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অংশ নেয়া গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, আমরা এই প্রকল্পের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সিমেন্ট সরবরাহ করেছি। তিনি আরো বলেন, মেগা প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের পণ্যের দক্ষতা ও গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রেখে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, স্থানীয় সিমেন্ট নির্মাতারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৫৮ লাখ টনে উন্নীত করেছে। মাত্র ১০ বছর আগে এই খাতে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ টন। মোট ক্রেতার প্রায় ৪৫ শতাংশ সরকারি খাত থেকে আসে। উন্নতমানের পণ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণ পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং বড় বড় প্রকল্পের কল্যাণে দেশের ইস্পাতশিল্প শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট ইস্পাত ব্যবহারের ৪০ শতাংশ সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে ইস্পাতের মোট ব্যবহার ছিল প্রায় ৮০ লাখ টন।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, গত এক দশকে দেশে ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে এখন প্রায় ৯০ লাখ টন হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পসহ উন্নয়ন কাজগুলো পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষমতা বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। সরকার বৃহৎ প্রকল্প নিলে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় বলে মনে করেন তিনি। শেখ মাসাদুল আলম বলেন, সরকার ভিশন-২০২১ ঘোষণার পর আমরা সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করি।
দেশের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্থানীয় ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্যের মান বাড়াতে উৎসাহিত করছে। কারণ, আন্তর্জাতিক দরপত্র জেতার জন্য আমাদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তিনি মনে করেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থিরতার মধ্যে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে তবে দেশে ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। তিনি জানান, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডলার ঘাটতির পাশাপাশি নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশে এ খাতের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি আশা করেন যে, আগামীতে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। তবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিকমানের পণ্য সরবরাহ করলেও জিটুজি (অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে নিজ দেশের সরকারের প্রকল্প) ভিত্তিতে বাস্তবায়িত কাজে তারা অংশ নিতে পারে না। এ প্রেক্ষাপটে তিনি জিটুজি প্রকল্পেও স্থানীয় পণ্যের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য চুক্তিতে বিধান রাখার দাবি জানান।