বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প পর্যায়-৩’। এই প্রকল্পের আওতায় ৮ বিভাগের ৪ হাজার ৪শ ৫৭টি ইউনিয়নে স্থাপন করা হবে গ্রাম আদালত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ এর অধীনে গ্রামের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কতিপয় ছোটখাটো বিরোধ ও বিবাদের সহজ ও দ্রুত নিস্পত্তিই হচ্ছে এর লক্ষ্য। বিবাদের ধরনের দেওয়ানী বা ফৌজদারী উভয়ই হতে পারে।
গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কেসগুলোই বিচার করতে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মামলার জট কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে অর্থের প্রধান উৎস, যার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার (এক-তৃতীয়াংশ সর্বমোট ফান্ডের) ও ইউএনডিপি রয়েছে। মোট ৫০ দশমিক ০১ মিলিয়ন ইউএস ডলার। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পটি জুলাই ২০২২ থেকে শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ২০২৭ সালে।
তবে এই প্রকল্পটি মার্চ ২০২৩ সালে একনেক থেকে অনুমোদিত হয়। প্রচলিত সরকারি নিয়মে এবং বাস্তবায়নাধীন সংস্থাগুলোর সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মাবলি অনুসরণ করে শূন্যপদ বা নতুন পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে লোকবল নিয়োগ করা হয়। মাঠপর্যায়ের ৫০৬ জন এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালনা ইউনিটে কর্মাধীন মোট ৩২ জন, যা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জাতীয় প্রকল্প পরিচালক (সরকারি দ্বিতীয় বা তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা) নেতৃত্বে এবং ইউএনডিপি থেকে একজন জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী এর সমন্বয়ে প্রকল্পটি পরিচালিত।
এক প্রশ্নের জবাবে গ্রাম আদালত শক্তিশালী করার প্রত্যয় পুনরায় ব্যক্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, মামলা-মোকদ্দমা হ্রাসে সহায়তা করতে এবং গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে আমাদের সরকার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনমুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরো বলেন, দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, আনুষ্ঠানিক আদালত ব্যবস্থায় মামলার জট কমিয়ে আনতে গ্রাম আদালত একটি চমৎকার বিকল্প পন্থা। মো. তাজুল ইসলাম এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবাদ-বিরোধ নিরসনে গ্রাম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে।
উল্লেখ্য, প্রথম দুই ধাপের সাফল্য উৎসাহিত হয়ে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। প্রকল্পটি গ্রহণের সময় পুরো বাংলাদেশে গ্রাম আদালত পরিষেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের লক্ষ্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় অংশীজনদের ভূমিকা বিবেচনায় রেখে টেকসই গ্রাম আদালত ব্যবস্থা তৈরি করা।
গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প পর্যায়-৩ এর পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ভোরের কাগজকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ৮ বিভাগের ৪ হাজার ৪শ ৫৭টি ইউনিয়নে স্থাপন করা হবে গ্রাম আদালত।
তিনি বলেন, গ্রাম আদালত আইন-২০০৬ এর অধীনে গ্রামের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কতিপয় ছোটখাটো বিরোধ ও বিবাদের সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তিই হচ্ছে এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মামলা বা বিবাদের ধরণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিবাদের ধরনের দেওয়ানী বা ফৌজদারি উভয়ই হতে পারে। গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কেসগুলোই বিচার করতে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মামলার জট কমে আসবে বলে ধারণা করছি।