বিডি২৪ভিউজ ডস্ক : দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু যেভাবে ভূমিকা রেখেছে, চট্টগ্রামে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সেভাবেই ভূমিকা রাখবে।
গতকাল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল: এ লিপ টুওয়ার্ডস ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কনসেপ্টকে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করেছেন। চট্টগ্রামের মতো আরেকটি সিটি যাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে তোলা সম্ভব হয় সেজন্য এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাকে সিটিতে রূপান্তর করা এবং সেখানে আবাসন থেকে শুরু করে শিল্পায়নের মাধ্যমে নতুন একটি শহরের রূপরেখা নির্মাণের জন্য এ টানেল তৈরি করা হয়েছে। এ শহরের সঙ্গে কক্সবাজারসহ মাতারবাড়ী বন্দরের সংযোগ তৈরি হবে। এছাড়া টানেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক আট লেনের কাজ শুরু হবে। তখন সারা দেশের মতো এ মহাসড়কে ১৩ বা ১৪ টন না সরাসরি ২৫ টনের গাড়ি চলাচল করবে। টানেলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মিরসরাইয়ে দেশের বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কোনো বিকল্প নেই। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা গেলে মাত্র ২ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে মিরসরাই শিল্প নগরে আসা যাবে যা দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা আমরা সরকারকে দেব।’
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কনসেপ্টকে ধরে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরী অংশে নতুন করে পরিকল্পনা করা সম্ভব কম হলেও আনোয়ারা অংশকে নতুন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সেখানে এখন থেকে নগরায়ণের পরিকল্পনা করতে হবে। কেউ চাইলে যেখানে সেখানে যাতে স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে। সেখানে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে আবাসন, শিল্পায়ন করা হবে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে। এলাকাটি হবে নতুন চট্টগ্রামের অংশ, যার কারণে একটি দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন খুবই জরুরি। কিন্তু টানেল নির্মাণ করা হলেও কক্সবাজার কিংবা মাতারবাড়ীর যে সংযোগের কথা বলা হয়েছে তাতে শুধু সড়কপথে আনোয়ারার উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো উন্নত করা হয়নি। যার কারণে টানেলের সুফল এখন পাওয়া যাবে সেটা বলা যাচ্ছে না। মহাসড়কে কোনোভাবেই যাতে টমটম বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা না চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্ত না করা হলে এখনই সুফল পাওয়া যাবে না টানেলের।’
চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে সহসভাপতি রাইসা মাহবুব, চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, বিএসআরএম চেয়ারম্যান আলীহুসেইন আকবরআলী, টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী, লুব-রেফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।