তিন মাসে ৮৮২৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে পল্লী ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে ব্যাংক। এসব ঋণের বিপরীতে আদায়ের হারও সন্তোষজনক। যদিও এ খাতে খেলাপির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন। কিন্তু ঋণখেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষিঋণের স্থিতি ৫৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষিঋণে খেলাপির হার ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৯৫০ কোটি।

এই তিন মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। ব্যাংকটি গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মোট ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। ৬৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। আলোচ্য তিন মাসে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ৪৮৮ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৪৪৬ কোটি এবং আইএফআইসি ব্যাংক ৪৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পল্লী ও কৃষিঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৩৯৭ কোটি টাকা।

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষকরা ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর বিপরীতে তারা পরিশোধ করেছেন ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর আগেও কৃষকরা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছেন। কিছু কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বিতরণ করেছে। আবার কিছু ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রায় অর্জন করতে পারেনি। এ রকম ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যা আটটি। এমনকি কোভিড-১৯-এ সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যেও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় হয়েছে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। ওই বছর কৃষকরা ২৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করেছেন।

দেশের কৃষকদের দেওয়া ঋণ সুবিধার বড় অংশই বিতরণ হচ্ছে এনজিওর মাধ্যমে। ব্যাংক থেকে কৃষকরা ঋণ পান সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদে। কিন্তু এনজিওর মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদহার দাঁড়াচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশে। তা ছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছার সক্ষমতা নেই দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের। এ কারণে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতের ঋণের ৫০-৮০ শতাংশ এনজিওকে দিয়ে দিচ্ছে। এনজিওগুলো ব্যাংক থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দুইগুণ-তিনগুণ সুদে বিতরণ করছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এত দিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃ‌ষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষিকাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যাদের চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি নেই, কিন্তু নিজ হাতে কৃষিকাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য ছাদকৃষি একটি উত্তম বিকল্প ব্যবস্থা। শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি ছাদকৃষি পরিবেশ রক্ষা ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাদকৃষিতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হ‌য়ে‌ছে। এ খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রাহ‌কের চা‌হিদা যাচাইবাছাই ক‌রে ব্যাংক কত টাকা ঋণ দে‌বে এবং কীভা‌বে আদায় কর‌বে তা নির্ধারণ কর‌বে।

এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা, কৃষি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১ হাজার ৪৭ কো‌টি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগু‌লো‌কে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ ও প্রাণিসম্পদ খাতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ কর‌তে বলা হ‌য়েছে।

কৃষি
Comments (0)
Add Comment