ট্রেনে পদ্মা পাড়ি, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণের মানুষ

পদ্মায় খুলেছে নতুন দুয়ার। আরেক স্বপ্নপূরণ হলো দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার মানুষের। গতকাল ঢাকা থেকে পদ্মা রেল সেতুতে যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো চলল ট্রেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে খুব কম সময়েই গন্তব্যে পৌঁছেছে মানুষ। প্রথমবারের মতো ট্রেন চলাচলে রেললাইনের দুধারে উপস্থিত হয়ে মানুষ হাত নেড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

খরস্রোতা পদ্মার বুক চিড়ে বাসযোগে দক্ষিণের পথে চলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। সেই পথে এবার ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরার স্বপ্নও পূরণ হলো পদ্মাপাড় ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।

খুলনা থেকে বুধবার রাতেই পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় কমলাপুরে আসে আন্তনগর খুলনা এক্সপ্রেস ট্রেন। সকাল সোয়া ৮টায় প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে ফের পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণের পথে চলে যায় ট্রেনটি। ইতিহাসের সাক্ষী হতে অনেকে স্টেশনে চলে আসেন খুব সকালেই। এতদিন যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চললেও এখন থেকে দক্ষিণের পথে চলা সুন্দরবন এক্সপ্রেসের সঙ্গে বেনাপোল এক্সপ্রেসও চলবে পদ্মা সেতু হয়ে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে প্রথম যাত্রার সাক্ষী হতে বৃহস্পতিবার ভোরে কমলাপুর স্টেশনে আসেন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান লালন। মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রথম রেলযাত্রার যাত্রী হতে পেরেও উচ্ছাস প্রকাশ করেন তিনি। অন্য যাত্রীরাও জানান, গত বছর জুলাইয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গিয়েছিলাম। এবার রেললাইনটা চালু হলো, এটা একটা স্বপ্নের মতো। আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। পদ্মা সেতু হয়ে প্রথম ট্রেন যাত্রার সাক্ষী হতে অনেকে ট্রেনে চড়েন। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে প্রথম ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমাস্টার বা চালক ছিলেন আসাদুল ইসলাম।

কুষ্টিয়া থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি রাত দেড়টায় কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে আসে। এখানকার নির্ধারিত ৬০টি আসনের বাইরে অনেকেই স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনে দাঁড়িয়ে বা আসন ভাগ করে ঢাকা পৌঁছান বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৫টায়। কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের বুকিং ইনচার্জ সাইদুজ্জামান জানান, ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার ৩৫০ টাকা আর এসি চেয়ার ৫৮০ টাকা। কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪০টি শোভন চেয়ার ও ২০টি এসি সিট বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ৩০টি শোভন চেয়ার ও ১০টি এসি আসন রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, টিকিট দিতে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। প্রথম দিনেই সব টিকিট বিক্রি হয়েও আরও ৬০টি স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হয়েছে। বুধবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার গণমাধ্যমকে জানান, ট্রেনটিতে আসন সংখ্যা ৯০৮টি। প্রথমদিন শতভাগ যাত্রী নিয়েই ছেড়ে গেছে ট্রেনটি।

গত ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক ট্রেন। সেদিন একটি গ্যাংকার এবং তিন মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর কমলাপুর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়। এরপর গত ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন সপ্তাহ পর শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল।

Comments (0)
Add Comment