বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে দেশের অভ্যন্তরে আর একটি ডলারও বিনিয়োগ করা হবে না। ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ বিলিয়নের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ডলার আসবে। এছাড়া আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী ১৩ ডিসেম্বর অনুমোদন পাবে। দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। তখন রিজার্ভ আরও বাড়বে। এছাড়া অর্থ পাচার ও হুন্ডি বন্ধে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে রেমিটেন্স আসার পরিমাণও বাড়ছে। এজন্য দেশের রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (এআরএফ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ আগামী মাসের ডিসেম্বরে পাওয়া যাবে। তার আগেরদিন দাতা সংস্থাটির পর্ষদ সভায় ঋণ অনুমোদন হবে। আর স্টাফ পর্যায়ে ঋণের চুক্তি হওয়ায় এ ঋণ পাওয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। মূলস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা বর্তমানে একেবারে তলানীতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। আমরা সুড়ঙ্গের কাছ থেকে আলো দেখতি পাচ্ছি। চলতি অর্থবছরে আমরা রিবাউন্স (ঘুরে দাঁড়াব) করব। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি হবে ৮ শতাংশ। যা আগামী জুনে সাড়ে ৬ শতাংশ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিন্ডিকেট হচ্ছে। সেজন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
অর্থ পাচারের জের টেনে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, হুন্ডির চেয়ে ব্যবসার আড়ালে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি অর্থ পাচার হয়। যেমন- দুবাইতে ১৩ হাজার বাংলাদেশী কোম্পানি রয়েছে। এসব পাচারের অর্থে গড়া প্রতিষ্ঠান। একইভাবে পর্তুগালে আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। অর্থের উৎস কিন্তু পাচার। আগে প্রতিমাসে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হতো। পরবর্তীতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এলসির পরিমাণ কমেনি। এজন্য এলসি বিল ৮-৯ বিলিয়নের স্থলে ৪-৫ বিলিয়নে নেমেছে। এতে কিন্তু সরবরাহ কমেনি। ডবে ডলার বাড়লে এলসির শর্ত তুলে দেওয়া হবে।
গভর্নর বলেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে আগামী ১৩ ডিসেম্বর আইএমএফের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। আমরা আশা করছি, ওই সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের সঙ্গে আমরা খুব ভালোভাবে সমঝোতায় আসতে পেরেছি। আমরা তাদের দুটো শর্ত পূরণ করতে পারিনি। তবে, বাকিগুলো পূরণ করতে পেরেছি। আমরা ওই দুটো শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের ব্যাখ্যায় তারা সন্তুষ্ট হয়েছে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ডলারে বন্ড ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছি। এটি চালু হলে প্রবাসীরা ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবে। এর ফলে ডলার প্রবাহ গতিশীল হবে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ডলার সংকট নিয়ন্ত্রণ করতে আমদানিতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিলাসী পণ্য আমদানি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করে আসছিল ব্যাংকটি।
এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা বিলাসী পণ্য আমদানিতে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বলেন, ডলার সংকট কাটাতে হলে অবশ্যই বিলাসী পণ্যের আমদানিতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ বিষয়ে বলেছি। বৈঠক শেষে রেফায়েত উল্যাহ মৃধা বলেন, মূলত বৈঠকে মুদ্রানীতি-ডলারের দাম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিকে কিভাবে স্থিতিশীল করা যায় সেটি নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। গভর্নর বলেছেন, খুব দ্রুতই আমাদের অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে।