বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাদের ধরপাকড় নিয়ে দিল্লি কোনো মন্তব্য করতে চায় না বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে বলব, আমরা সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি ও মর্যাদা দিই। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
অরিন্দম বাগচী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনও তাদের একটি অভ্যন্তরীণ ঘরোয়া বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন, এখানে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে বলব, আমরা সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি ও মর্যাদা দেই। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে ভিশন, তার প্রতিও আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। জবাবে অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘বিরোধীদের দমন, নেতাদের গ্রেফতার, জেলে ঢোকানো- এসব মন্তব্য তার নয়। এগুলো প্রশ্নকারীর’। তারপর তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করতে চায় না।’
ভারত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে না : ভারত-যুক্তরাষ্ট্র টু-প্লাস-টু (পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী) বৈঠকে গতকাল বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’ দিল্লির সুষমা স্বরাজ ভবনে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের আলোচনা হয়েছে। ভারতের পক্ষে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিত সিং সান্ধু এবং পদস্থ অফিসাররা। আমেকিার পক্ষে দুই মন্ত্রী ছাড়া ছিলেন ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এরিক গ্র্যাসেটি এবং পদস্থ কূটনীতিকরা। বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা, প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধারী আরামনের উপস্থিতিতে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ নিয়েও আলোচনা হয়। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা জানতে চাইলে, স্পষ্ট ভাষায় তাদের ‘বাংলাদেশ নীতি’ জানিয়েছি। আমরা জানাই, তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য বা হস্তক্ষেপ করা আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না।
উন্নয়ন এবং নির্বাচন বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশের জনতাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন।’
বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ‘বাংলাদেশের নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও অংশীদার হওয়ায় আমরা তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি। একই সঙ্গে আমরা বাংলাদেশের স্থায়ী, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল রাষ্ট্র গঠনের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরন্তর সমর্থন করে যাব, যেটা তাদের জনগণ চাইবেন। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে বাংলাদেশকে দেখি তাই ওদের পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছি।’
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিকট প্রতিবেশী দেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।’ তিনি বাংলাদেশের নামোল্লেখ না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। জনতার রায়কে সম্মান দেবে।’ এ বিষয়ে আমেরিকার জবাব কী তা এখনো জানা যায়নি। প্রশ্ন ছিল, চীন তো প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ভারত কি চিন্তিত? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশই সিদ্ধান্ত নেবে।