ডলার পাচার রোধে কঠোর নজরদারি

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দীর্ঘ দিন ধরেই দেশে ডলার সংকট চলছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশ থেকে ডলার পাচারের চেষ্টা করছে চোরাকারবারিরা। মূলত কিছু মানি একচেঞ্জের মাধ্যমে ডলার পাচারের ঘটনা ঘটছে। এমন ৪২টি কোম্পানিকে নোটিশ দিয়েছে এবং ২২টির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ডলার পাচারের আশঙ্কা আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে স্থল সীমান্ত ও বিমানবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানোর পাশাপাশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। এমন সুযোগে ইচ্ছামতো দামে খোলাবাজারে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। এসব ডলার বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত অনেক মানি একচেঞ্জ কোম্পানি। বেচাকেনা হওয়া ডলার আবার দেশের বিভিন্ন স্থল সীমান্ত ও বিমানবন্দর দিয়ে পাচারের চেষ্টাও হচ্ছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডলার পাচারের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কায় স্থল সীমান্তে ও বিমানবন্দর দিয়ে ডলার পাচার ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয় সরকার।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আকাশপথে মুদ্রা পাচার ঠেকাতে বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, গোয়েন্দা নজরদারিও ত ত বাড়ানো হচ্ছে। বাড়তি সর্তকর্তার সঙ্গে যাত্রীদের লাগেজ তলস্নাশি অব্যাহত রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বিমানবন্দরের মানি একচেঞ্জ বুথগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি। মুদ্রা পাচাররোধে ভিআইপি যাত্রীদেরও তলস্নাশির আওতায় আনা হয়েছে।

কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, এমন কঠোর নজরদারির মধ্যেও ডলার পাচারের চেষ্টা চলছে। শনিবার বিজিবির অভিযানে মেহেরপুরের বুড়িপোতা সীমান্ত থেকে ৩৩ হাজার ২০০ ইউএস ডলার জব্দ হয়েছে। জব্দ হওয়া ডলারগুলো ভারতে পাচারের চেষ্টা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে ৬ বিজিবির (চুয়াডাঙ্গা) অধিনায়ক লে. কর্নেল সাঈদ মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা সীমান্তে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে এক ব্যক্তিকে ধান ক্ষেতে পানি দিতে দেখা যায়। তার সম্পর্কে থাকা আগাম তথ্য এবং তার গতিবিধি সন্দেহ হওয়ায় তাকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

বিজিবি কর্মকর্তা বলছেন, পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুরনো কাপড়ে ও পলিথিনে মোড়ানো একটি ব্যাগে স্কচটেপ পেঁচানো চারটি ইউএস ডলারের বান্ডিল পাওয়া যায়। বান্ডিলে মোট ৩৩ হাজার ২০০ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। ডলারগুলো ভারতে পাচারের চেষ্টা হয়েছিল। এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জব্দকৃত ইউএস ডলার মেহেরপুর ট্রেজারি অফিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান ডলার পাচার ঠেকাতে স্থল সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারিসহ ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিজিবির সব ব্যাটালিয়নকে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৮০ হাজার ডলার জব্দ করা হয়। ওই ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসে ডলার পাচারের সঙ্গে অনেক মানি একচেঞ্জের জড়িত থাকার তথ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যাংকের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের সূত্র ধরে অবৈধভাবে ডলার বেচাকেনা এবং বেআইনিভাবে কার্যক্রম চালানোর দায়ে মোট ৪২টি মানি একচেঞ্জকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর প্রথম দফায় পাঁচটি এবং দ্বিতীয় দফায় তিনটি মানি একচেঞ্জ সিলগালা বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছর প্রথম দফায় ৯টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবশেষ সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরে বাংলা নগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানকে সাসপেন্ড বা কার্যক্রম বন্ধ বা সিলগালা করে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে ২২টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। একই সঙ্গে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করাও হয়েছে। বাকি মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভাগসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি করছে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ডলার বেচাকেনার ব্যবসা করতে পারবে না বলে আবারও নোটিশ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ থেকে মুদ্রার বিপরীতে ডলার হিসেবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে শর্ত আরোপ বা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

ডিবি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, অসৎ উদ্দেশে বা অবৈধভাবে ডলার মজুত করলেও তাকে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে ডিবির গোয়েন্দারা কাজ করছেন। বিভিন্ন মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ডলার
Comments (0)
Add Comment