বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী পদ্ধতি, বিধি-বিধান ও ভোট ব্যবস্থাপনাসহ ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি জেনে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল‘সন্তোষ প্রকাশ’করেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ‘আলোচনা ভালো’হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্য লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুস।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল।
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠকে সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং যুগ্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন। কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলে ছিলেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের নির্বাচনী সহযোগিতা বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা জিপ্পি ওজাগো, গভার্নেন্স অ্যান্ড পিস ডিরেকটরেটের রাজনৈতিক উপদেষ্টা লিন্ডিউই মালেলেকা, সহ-গবেষণা কর্মকর্তা সার্থক রায় এবং গভার্নেন্স অ্যান্ড পিস ডিরেকটরেটের বিভাগের নির্বাচনী সহযোগিতা বিভাগের প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুস।
বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু এবং পর্যবেক্ষকদের মতামত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ইসি সচিব জাহাংগীর। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ছাড়াও পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক সেরে লন্ডনে ফিরে গিয়ে প্রতিবেদন দেবেন কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষকরা। কমনওয়েলথের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে কি না, তা নির্ভর করবে সেই প্রতিবেদনের ওপর। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান ইসি সচিব।
আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে তফসিল ঘোষণার চারদিনের মাথায় ইসির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠক সারলেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রতিনিধিরা। তারা যখন বৈঠক করছেন, তখন ‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল করছে বিএনপি। এই সফরে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় থাকবেন কমনওয়েলথ প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশন ছাড়াও পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, এই প্রতিনিধি দল কমনওয়েরলথের অগ্রবর্তী দল। পরিস্থিতি জেনে তারা কমনওয়েলথ সচিবালয়ে গিয়ে রিপোর্ট জমা দেবেন। এরপর প্রতিবেদন পেয়ে কমনওয়েলথের পূর্ণাঙ্গ টিম নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার বিষয়ে সম্মতি জানাবেন কি, জানবেন না- সে পরে সিদ্ধান্ত নেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। শুধু নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনী কর্মপদ্ধতি ও নির্বাচনী আইন, বিধি-বিধান, ভোট ব্যবস্থাপনা, প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য কী ব্যবস্থা, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট ও ভোটের দিন যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অবহিত হতে চেয়েছেন। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে এসব বিষয় তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সফরকারী প্রতিনিধি দল।
এটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছিল জানিয়ে জাহাংগীর আলম বলেন, তারা কিছু জানতে চেয়েছেন, তুলে ধরেছি। তাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে জানা। অন্য কোনো প্রশ্ন তারা করেননি। জানতে চেয়েছেন দেশের নির্বাচন পদ্ধতিতে ভোটাররা কীভাবে ভোট দিতে যাবেন, ভোট নেওয়া হবে, ভোট স্বচ্ছ করতে গেলে ভোট পদ্ধতিসহ রিটার্নিং অফিসারসহ সবার কাজগুলো জেনেছেন।
আগামীতে কত সদস্যের কমনওয়েলথ দল আসতে পারে সে বিষয়ে প্রতিনিধি দল কোনো ধারণা দেয়নি বলে সচিব জাহাংগীর আলম জানান। তিনি বলেন, আজ এখানে এসেছে চার সদস্যের অগ্রবর্তী দল। তারা পরিস্থিতি দেখে (সদরদপ্তরে) গিয়ে রিপোর্ট করবেন, তারপর চূড়ান্ত করে আমাদেরকে জানাবেন।
বৈঠক শেষে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের গভার্নেন্স অ্যান্ড পিস ডিরেকটরেটের বিভাগের নির্বাচনী সহযোগিতা শাখার প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুস বলেন, নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি মূল্যায়নে কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্রের যে কোনো দেশে পর্যবেক্ষক পাঠানো তাদের এক ধরনের প্রথা। কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কাজ করি। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনসহ নানা ধরনের অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পাশাপাশি বিরাজমান পরিবেশসহ পর্যবেক্ষণ করছি আমরা।
কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যান্ড্রুস বলেন, আমাদের মধ্যে বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। কতটা প্রস্তুতি হয়েছে তা জানতে পেরেছি। সামনের দিকে তাকিয়ে আছি, অংশীজনদের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হবে। ২২ নভেম্বর আমাদের চলে যাবার কথা। তারপর কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেব। বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের আগাম মন্তব্য করতে চাননি তিনি।