বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ৩০০ আসনেই একক প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএমও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। ১৪ দলীয় জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক রাজনৈতিক দলই এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন ছেড়ে জোট বেঁধে ভোটের মাঠে নেমেছেন কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। একে একে জোট বেঁধে নির্বাচনমুখী হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন জোটে থাকা অনিবন্ধিত অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। দেশজুড়ে জোরেশোরেই চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। সব মিলিয়ে সারাদেশে বেজে উঠেছে দ্বাদশ নির্বাচনের ডামাডোল।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
তফসিলকে স্বাগত জানায় ১৫টি রাজনৈতিক দল। এদের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রিক দল (বাসদ)।
বাকি যে ১২টি দল তফসিলের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি; সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ কংগ্রেস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এই দলগুলোর মধ্যে খেলাফত মজলিসসহ পাঁচটি ইসলামী দলের মোর্চা ‘সমমনা ইসলামী দল’ ইসিকে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছিল। এই দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বর্তমানে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ ৭টি দল নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে একাট্টা। জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রলোভনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গিয়ে ভুল করেছিলাম আমরা। ওই ভুল আর করতে চাই না।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো শুরুতে নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারের এক দফা দাবিতে অবরোধ এবং হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, ১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোট ছাড়াও এলডিপি, গণফোরাম রয়েছে।
অন্যদিকে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অনিবন্ধিত দলগুলোকে ভোটের মাঠে
নামাতে গঠিত হতে থাকে একের পর এক নির্বাচনী জোট। জোটে কদর বাড়ছে নামসর্বস্ব দলগুলোর। নিবন্ধিতদের পাশাপাশি অনিবন্ধিত অনেক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ জানায়।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে। জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএমও ৩০০ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। আর যারা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন- তাদের স্বজনদের মধ্যে যারা প্রবাসে অবস্থান করছেন তারাও এখন বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচারে শরিক হচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে না থাকলে ছোট ছোট দলগুলোর সুবিধা হবে। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন দেশে রাজনীতিতে অনেক রকম খেলা হয় এবং হচ্ছে। আসলে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে শুধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করছে। নীতি-আদর্শ থাকলে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এমন হতো না। সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে এরকম আরো অনেক দলের সৃষ্টি হচ্ছে।