বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হবে। দেশের মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারে সেই উদ্যোগও থাকবে। এর ফলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কঠোর সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, জনগণ সিন্ডিকেট করলে অন্য সিন্ডিকেট পাত্তা পাবে না। তিনি বলেন, এমন একদিন আসবে, যখন যখন কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে ভোক্তারই প্রতিবাদ করবে। এ কারণে ভোক্তাদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
শনিবার ঢাকার চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ‘ভোক্তা অধিকার সচেতনতা’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালেতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশে উৎসবের সময় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য কমান। আমি ব্যবসায়ীদের খুব অনুরোধ করেছিলাম, সামনে রোজার ঈদ, আপনারা দয়া করে একটু বিবেক সম্পন্ন হউন এবং সেই বিবেচনায় একটু দাম কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেবেন। কিন্তু তারা তা করেননি। পরে আমাকে বলতে হয়েছে, আপনাদের বিশ্বাস করে আমি ভুল করেছিলাম।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনী ইশতেহার দলের একটি গ্রুপ আছে, তারা তৈরি করে থাকে। যেহেতু আওয়ামী লীগের মূল উদ্দেশ্য জনগণ, সেহেতু আমি আশা করি তারা সেই দিক বিবেচনা করে ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাখবেন, যাতে জনগণের স্বস্তি হয়।
টিপু মুনশি বলেন, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে- এটি সত্যি। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের সফলতা আছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে টিসিবিসহ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার জন্য সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।
পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে সরকার বেশকিছু করণীয় নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে গরুর মাংস আমদানি করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় খামারিদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে মাংস আমদানির পরিকল্পনা সরকারের নেই। মাংস আমদানি করলে দেশের মানুষকে ৪০০-৪৫০ টাকায় খাওয়ানো সম্ভব। কিন্তু আমরা সবসময় দেশের খামারিদের কথা ভেবেছি যে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। তিনি বলেন, কোরবানির অর্ধেক গরু ভারত থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে একটি গরুও আমদানি করতে হয় না বরং উদ্বৃত্ত থাকে। এ খাতে অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। অনেকে চাকরি না করে গরুর খামার দিচ্ছেন।
তাই দেশের খামারিদের কথা বিবেচনায় রেখে আপাতত মাংস আমদানি করতে চাই না। তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য আমদানিতে সমন্বয়হীনতা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই কথাটি আমি স্বীকার করতে রাজি। কেননা আমরা যখন চাইলাম ডিম আমদানি করব, সেদিন থেকে প্রায় এক মাস পরে আমাদের বলতে হলো। কারণ আমরা সেই নির্দেশটা দিতে পারি না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আমাদের এসিস্ট করল যে, তোমরা এই দামে দিতে পারো। যার জন্য সেখানে একটু সমন্বয়হীনতা রয়েছে বা একটু দেরি হয়েছে। পেঁয়াজ ও আলুর ক্ষেত্রেও কিছুটা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে টিপু মুনশি বলেন, ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় যখন আমদানির অনুমতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তখন ডিমের দাম কমে গেল। মাত্র ৬২ হাজার ডিম আমদানির পর প্রতি ডজনে আরও ২০-৩০ টাকা কমে গেল। আলুর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এর মানে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুত আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে বাজারজাত করছে না।
চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর পরও দাম না কমা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ডলারের মূল্য আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেগুলো আন্তর্জাতিক বাজার বা ডলারের মূল্যের ওপর নির্ভর করে। আমরা চাইলেও সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারি না। আমরা যেটা পারি, সেটা হলো শুল্ক কমাতে। যেমন চিনির দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দামে কোনো প্রভাব পড়েনি বরং বেড়েছে। ফলে এর সুফল ভোক্তা পায়নি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ ঘাটতি আছে। আমরা প্রায় ২৫-২৬ লাখ টন পেঁয়াজ খাই। আমাদের সেই পরিমাণই উৎপাদন হয়। কিন্তু ২৫-২৬ শতাংশ পেঁয়াজ রাখতে পারি না, পচে যায়। যার জন্য পেঁয়াজটা আমদানি করতে হয়। যখন পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা ঠিক করে আমদানির সিদ্ধান্ত নিলাম, তার কিছুদিন পর তারা প্রতিটনে ৮০০ ডলার ঠিক করে দিল। এতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
ছায়া সংসদে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, কাউকে বাদ দিয়ে আমরা কাজ করতে পারব না। ব্যবসায়ী সমাজ, যেসব প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় আছে, সবাই মিলে কাজ করছি। ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা প্রতিযোগিতা কমিশন এককভাবে কিছু করতে পারবে না। ব্যবসায়ী সমাজকে যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্ত করতে না পারব, ততক্ষণ ফল আসবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে গত ৮ আগস্ট এ বিতর্ক প্রতিযোগিতার শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপে প্রতিযোগিতা শেষে ফাইনালে মুখোমুখি হন ইডেন মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের হারিয়ে বিরোধী দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা জয়ী হন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দল ও রানার্স আপ দলের হাতে ট্রফি ও সনদসহ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বিজয়ী দল দুই লাখ টাকা ও রানার্স আপ দল এক লাখ টাকা পুরস্কার পান।
প্রতিযোগিতা শেষে দ্র্রব্যমূল্য বাড়ার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমরা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নই। তারা বড় বড় পুঁজি নিয়ে বাজারে আসে। লাভ যেমন আছে, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে। তাই ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় রেখে উন্মুক্ত আমদানি ব্যবস্থা রাখতে হবে।