নিজস্ব প্রতিবেদক : রাঙামাটির কাপ্তাই, ওয়াগ্গা, রাইখালী,বাঙাল হালিয়া, ভালুইক্কা,ডংনালা,চাকুয়াসহ পাহাড়ি এই বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটা, পাচার ও পরিবহনের জন্য ও অঘোষিতভাবে অবৈধ পাচার কার্যক্রমের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার রাত নামলেই শুরু হতে পারে কাঠ-লাকড়ী পাচার কার্যক্রম। অনুসন্ধানে জানা গেছে এ পাচার কার্যকে সামনে রেখে মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন শ্রমিকরা। প্রতি বছর এদিন এলে ৪ থেকে ৫ মাস চলে বাধাহীন বৃক্ষ নিধন। পরবর্তীতে এসব গাছ ব্যবহৃত হয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মিল কারখানা এবং ইটভাটায়। গাছ কাটা ও পরিবহন শ্রমিকরা জানায় রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে সেগুন,জারুল,মেহগুনি,গর্জন,গামারি গাছ সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ কাটা হয়। এ মৌসুমকে সামনে রেখে রাত হলে এসব বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্হানে পাচারে পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েছে কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট।
এ পাচারকার্যে যে সকল শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে তারা বলেন শীতের মৌসুম এলে বছরে অন্তত টানা ৬ মাস এভাবে কাজ করে থাকি,এতে করে বন উজার হয় বিষয়টি সত্য আমরা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা নিরুপায়।
বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ায় পাহাড়ে গাছের পরিমাণ কমতে থাকায় বনে পশু পাখির আবাসস্থল ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, অতীতের ধারণা থেকে বলা যেতে পারে কয়েক বছর পূর্বে বর্তমান সময়ের মতো বন উজার হওয়ায় এরমধ্যে অনেক পশু-পাখি বিলুপ্তির পথে। এজন্য জড়িতদের দায়ী করে গাছ কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।বন রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা।
কাপ্তাই রাঙামাটি বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ উদ্যোক্তারা বলেন, বন উজাড়ের কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়, অবৈধভাবে গাছের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ কুরতে হবে, পাহাড়ে বন উজাড় হলেও বন বিভাগের কতিপয় ব্যক্তি প্রায় সময় উদাসীন থাকলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি সোচ্চার হয়েছে ফলে অনেকাংশ স্হানে অবৈধ কাঠ পাচার কার্যক্রম কমে আসলেও সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে বন বিভাগের কতিপয় কর্মচারীদের যোগসাজসে বন উজারের কার্যক্রম থেমে নেই।
বিষটি বন্ধে আশ্বাসের কথা জানিয়েছে বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শোয়াইব খান জানান, রিজার্ভ ফরেস্টে বৃক্ষ নিধন ও অবৈধ কাঠ পরিহন্ বন্ধে টহল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে যেন ইটভাটায় যাতে বনের কাঠ পরিবহন করতে না পারে সেজন্য সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনি কার্যক্রম বলবৎ থাকবে।
অপরদিকে বন উজার প্রতিরোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানানো হয়। সম্প্রতি এইচআরপিবির পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। জানা যায, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যারা অবগত হয়েছেন, জেলা প্রশাসকেরা হলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্মো জাহিদ উদ্দিন, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। নোটিশে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
আদেশের তিন পার্বত্য জেলার ইটভাটা মালিকেরা রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিট পিটিশন খারিজ করে দেন। পরে ইটভাটা মালিকেরা আপিল বিভাগে দুটি আপিল দায়ের করলে তা নিষ্পত্তি করে রায় দেন এবং চেম্বার কোর্টে দেওয়া স্থিতি অবস্থা বৃদ্ধি করেননি। এরপরও তিন পার্বত্য জেলায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করলে পদক্ষেপ নিতে আইনি নোটিশটি দেওয়া
হয়েছে। নচেৎ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা চেয়ে আদালতে যাবেন তিনি।