বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানতের বিপরীতে ন্যূনতম সুদহার দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণের সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে আমানতের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে।
প্রায় আড়াই বছর ধরে তিন মাসের মূল্যস্ফীতির গড় বের করে সর্বনিম্ন সুদহার নির্ধারণের নির্দেশনা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমানতের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার যেন মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম না হয় সেজন্য ২০২১ সালের অগাস্টে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে এদিন সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘‘বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত ঋণে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রেক্ষিতে আমানতের সুদহারের নিম্নসীমার আবশ্যকতা নেই।’’
এর আগে ২৯ নভেম্বর সুদহার বাজারভিত্তিক হওয়ায় ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের মধ্যে ব্যবধানের সীমা (স্প্রেড) তুলে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণ ছাড়া অন্যান্য ঋণে স্প্রেড ছিল সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ।
এরমধ্যে ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমাও তুলে নেওয়া হয়।
সুদহার বাজারভিত্তিক করতে গত জুলাই থেকে স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল- স্মার্ট) পদ্ধতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারবে। চলতি ডিসেম্বরের জন্য ‘স্মার্ট’ সুদহার ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ নির্ধারণ করায় ঋণ সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এসএমই ঋণের বিপরীতে এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ যুক্ত করতে পারবে ব্যাংক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের দুই মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল এর চেয়ে বেশি। এতে করে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন মাস ও এর চেয়ে বেশি মেয়াদের আমানতের সুদহার বেশি দিতে হত ব্যাংকগুলোকে।
এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের মধ্যে ব্যবধান (স্প্রেড) হত ২ শতাংশের কাছাকাছি। পরিচালন খরচের সঙ্গে মুনাফা যোগ করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ঠিক করে।
বর্তমানে মুনাফাসহ পরিচালন খরচ ব্যাংকভেদে আড়াই থেকে ৪ শতাংশের মতো। ব্যাংকাররা বলছেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানত সংগ্রহ করলে প্রায় সব ব্যাংক চাপে পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে ন্যূনতম সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এল।
নতুন সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকভেদে আমানতের বিপরীতে সুদহার কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যাংকাররা। তবে চাহিদা অনুযায়ী আমানত না পেয়ে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে বলে খবর হয়েছে।
এর আগে সরকারের পরামর্শে ২০২১ সালের এপ্রিলে ঋণ ও আমানতে নয়-ছয় সুদহার চালু করা হয়েছিল। পরে আমানতের নিম্নতম সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যের শর্ত দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানান কারণে পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এর পর থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকে। গত কয়েক মাসে তা ৯ শতাংশের ঘরে ছিল।