সর্বোচ্চ সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে সরকার। নিরাপত্তা নিন্ডিদ্র করতে এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঢেলে সাজাচ্ছেন নির্বাচনকালীন নানা পরিকল্পনা। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছুটির আবেদন করতে ফোর্সের সদস্যদের নিরুৎসাহিত করার এক নির্দেশনা জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর।

নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী পুলিশ সদর দফতর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাবেক মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। এর বাইরে নির্বাচনকালীন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশের প্রতিটি থানায় কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) গঠন এবং রেল ও সড়ক পথের নিরাপত্তায় ১০ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার।

পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসলে ছুটি বাতিল করা হয়নি। তবে যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত বড় একটি অনুষ্ঠান, তাই নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুলিশের সবগুলো ইউনিটের সদস্যদের ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কারও জরুরি বিষয় থাকলে সেখানে ভিন্নতা থাকবে। পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো হুমকি কিংবা আশঙ্কার খবর নেই। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে থানায় একটি করে কুইক রেসপন্স টিম করার বিষয়ে আইজি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (হেডকোয়ার্টার্স) মিয়া মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে- আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে নির্বাচনকালীন ফোর্স মোতায়েন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত সব পুলিশ/নন-পুলিশ সদস্যরা আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে হাজির থাকবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া র‌্যাব সদস্যদের ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করার জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়নগুলোয় পৃথক পৃথক স্ট্রাইকিং ফোর্স, কুইক রেসপন্স টিম, ছোট আকারের বোম্ব ডিসপোজাল টিম রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে সদর দফতর থেকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া হবে।  এদিকে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন্স শাখা থেকে প্রি-নির্বাচনি সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পৃথক আরেক নির্দেশনায় নির্বাচনি অপরাধ দমন কিংবা তাৎক্ষণিক উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রতিটি থানায় কুইক রেসপন্স ফোর্স বা বিশেষ টিম গঠনের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন্স শাখার অতিরিক্ত দায়িত্বপালনকারী অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিয়ান ওয়াজেদ স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি থানা এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্ট্যাটিক, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রাখা ও সার্বক্ষণিক স্ট্যান্ডবাই ফোর্স প্রস্তুত রাখতে হবে। নির্বাচনে সম্ভাব্য বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেফতার, মুলতবী গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, পলাতক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি থানা এলাকায় কৌশলগত স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও পুলিশের টহল জোরদার করা, কৌশলগত স্থানে মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ এবং র‌্যাবের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত করা, নির্বাচন-পূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা বহিরাগত প্রভাবশালী এবং অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারীদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গোয়েন্দাগিরিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সংগঠন কর্তৃক নির্বাচনি প্রচার ও সভা-সমাবেশে প্রতিদ্বন্দ¦ী দল বা প্রার্থী কর্তৃক হামলা, সহিংসতা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নির্বাচন কমিশন থেকে জারিকৃত পরিপত্র, নির্দেশনা এবং প্রাসঙ্গিক আইন, বিধিমালা ও বিধি অনুযায়ী মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এবং রাজনৈতিক দলসমূহের প্রাক্তন মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থান (বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের এলাকা, কূটনৈতিক স্থাপনা ও কেবিআই), জনসমাগমের (সিনেমা হল, বিপণিবিতান, আবাসিক হোটেল/রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন টার্মিনাল) স্থানে নাশকতামূলক কর্মকা রোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেট্রোপলিটন এলাকা ও এর আশপাশের বস্তি, মেস, হোটেলসহ সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য অবস্থানে তল্লাশি ও অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা, মহাসড়কে ও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঊর্ধ্বতন বা দায়িত্বশীল অফিসারের নেতৃত্বে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি ও অভিযান পরিচালনা করা, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা-পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত হওয়ার পূর্ববর্তী নজরদারি রয়েছে সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে আগাম পরিস্থিতি পর্যালোচনা-পূর্বক প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সালফার এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদির চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বোমা/বিস্ফোরক প্রস্তুতের জন্য সালফারের ব্যবহার রোধকল্পে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আনসার ও ভিডিপি সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার উদ্দীন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে সড়ক, রেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় ১০ হাজার সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মাঠে কাজ করছে। তবে কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে গার্মেন্টস কারখানার পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে পুলিশের সঙ্গে মাঠে ছিল ব্যাটালিয়ন আনসার। এর বাইরেও পরিস্থিতি অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা অনুসারে জেলা কমান্ডেন্ট আনসার সদর দফতরকে অবহিত করবেন। পরবর্তীতে সদর দফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি-সাপেক্ষে ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
Comments (0)
Add Comment