লাঠি বাঁশি নিয়ে রেললাইন পাহারায় আনসার

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নাশকতা ঠেকাতে রেললাইনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় পাহারা দিচ্ছেন আনসার সদস্যরা। পাশাপাশি রেলওয়ে পুলিশও পাহারা দিচ্ছে। পাহারায় নিয়োজিতদের শীতবস্ত্রের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) : ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গফরগাঁওয়ের ২৮ কিলোমিটার অংশে ৭০ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি দুই কিলোমিটার অন্তর রেললাইন পাহারায় ৫ জন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে রাতে তিনজন এবং দিনে দুজন পর্যায়ক্রমে পাহারা দিচ্ছেন।

কথা হয় গফরগাঁও ইউনিয়নের বাসুটিয়া গ্রামের আনসার সুরুজ মিয়া এবং ধামাইল গ্রামের মামুন মিয়ার সঙ্গে। সুরুজ মিয়া জানান, তিনি পেশায় একজন কৃষক। মামুন গফরগাঁও পৌর শহরে বাজার পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে উপজেলা প্রশাসনের ডাকে সারা দিয়ে লাঠি, বাঁশি নিয়ে রাতদিন রেললাইন পাহারা দিচ্ছেন তারা। সুরজ মিয়া জানান, গফরগাঁও অংশের বাসুটিয়া রেলব্রিজ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া পলিথিন টানিয়ে ঘন কুয়াশার মধ্যে পাহারা দিচ্ছেন তারা। তবে দূরে দেখার জন্য তাদের কাছে কোনো টর্চলাইট নেই। রাতে রেললাইন পাহারার জন্য টর্চলাইট খুবই জরুরি।

আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, গফরগাঁও উপজেলার ২৮ কিলোমিটার রেললাইন অংশকে ১৪টি পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছে। এতে ২ কিলোমিটার পরপর রাতে ৩ জন এবং দিনের বেলায় ২ জন করে আনসার সদস্য রেললাইন পাহারায় নিয়োজিত আছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের নির্দেশনায় অবরোধকালে রেললাইন পাহারায় আনসারের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যও দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

কাউনিয়া ও পীরগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের কাউনিয়ায় রেললাইনের নিরাপত্তা ও রেল চলাচল সুরক্ষিত রাখতে আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা আনসার ও ভিডিপির অফিস সূত্রে জানা যায়, রলপথ সুরক্ষায় উপজেলার তিস্তা ব্রিজ পশ্চিম পাড় থেকে উপজেলার বিজলের ঘুন্টি পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিমি. রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ। এ পথের ৮টি পয়েন্টে ৩ শিফটে ২৪ ঘণ্টা ৬৪ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য পাহারা দিচ্ছেন।

উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফেরদৌসী আকতার বলেন, উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিস থেকে প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে টর্চলাইট, জ্যাকেট, লাঠি ও লাল ফ্ল্যাগ দেওয়া হয়েছে। যতদিন হরতাল-অবরোধ থাকবে, ততদিন তারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

এদিকে পীরগাছা উপজেলায় ২১ কিমি. রেললাইনে ৯টি পয়েন্টে ৭২ জন আনসার ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে রেললাইন পাহারারত অবস্থায় আনসার সদস্যদের দেখা গেছে। কয়েকজন আনসার সদস্য জানান, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্ব পালনে তারা বদ্ধপরিকর। যে কোনো ধরনের নাশকতা মোকাবিলায় তারা সজাগ আছে।

উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ফারজানা কাদের সুমি জানান, ৯টি পয়েন্টে ৭২ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য রেললাইন পাহারায় নিয়োজিত আছেন। পয়েন্টগুলো হলো অন্নদানগর রেলগেট, বটতলী রেল পয়েন্ট, কালীগঞ্জ রেলগেট, কুকরা ভাঙ্গা রেলব্রিজ পয়েন্ট, হেলিপ্যাড রেল পয়েন্ট, উঁচাপাড়া রেল পয়েন্ট, দিলালপাড়া রেলব্রিজ পয়েন্ট, চৌধুরাণী রেলগেট পয়েন্ট ও ইচলারহাট রেল পয়েন্ট।

আখাউড়া (ব্রহ্মণবাড়িয়া) : গাজীপুরে রেললাইন কেটে দেওয়া এবং রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে হতাহতের ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত থেকে এ পথে নিয়মিত টহল শুরু হয়েছে। আখাউড়া রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মনিরুল ইসলাম এবং সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রেলপথে নাশকতা প্রতিরোধে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রেলপথের আখাউড়া রেল সেকশনের রেলওয়ে এলাকাজুড়ে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন পাহারার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ের নিজস্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন রেলওয়ে (জিআরপি) পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা।

আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার বলেন, এ পথে রাতে চলাচলকারী ট্রেন বড় বড় স্টেশন থেকে ছাড়ার আগে ট্রলিতে টহল দেবে রেলওয়ে পুলিশ। টহল পুলিশ নিরাপদ রেললাইনের ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে ওইসব ট্রেন।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট নূর নবী জানান, পূর্বাঞ্চল রেলপথে নাশকতা ঠেকাতে দিনরাত পাহারা চলবে। ট্রলি ছাড়া হেঁটেও রেলপথ পাহারা দিচ্ছেন রেলকর্মীরা।

ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ : ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা ও রেললাইন উপড়ে ফেলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি করার প্রতিবাদে নেত্রকোনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। জেলা শহরের পৌরসভার সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ্ এমরানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু, নেত্রকোনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোকন উজ্জামান রোকন, নারী প্রগতি সংঘের নেত্রকোনা কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট পূরবী কুন্ড, নারী নেত্রী কোহিনূর বেগম প্রমুখ।

রেললাইন
Comments (0)
Add Comment