আচরণবিধি লঙ্ঘনে মামলার পথে ইসি

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে যাচ্ছে। বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তার সমর্থকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হতে যাচ্ছে তিনটি। ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাই, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী এ তালিকায় রয়েছেন। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এ নির্বাচনের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি এ পর্যন্ত ২০১টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর জন্য তলব করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য সতর্ক করেছে। তারপরও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে থাকায় কমিশন আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তাদের মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা নাটোরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি মানাতে আরও কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কোনো ভোটারকে ভয়ভীতি দেখালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত হিসেবে কাজ করছেন। তাদের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে তারা তাৎক্ষণিক অভিযোগ তদন্তপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবেন এবং নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আইনে তাদের ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এমনকি প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তার সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, একই দলের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ ওলি, আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান, তালতলি উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ কাদেরসহ আরও কয়েকজনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি অর্থদণ্ডের সুপারিশ করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাই এবং তার সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে জুডিসিয়াল আদালতে মামলা করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপা থানার ১৪ নম্বর দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে আব্দুল হাই এবং তার অনুসারীরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়কে মহড়া দেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির এপিএস মো. মাজেদুল ইসলাম সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১০-১২ জন লোকসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানের সমর্থক আবদুর রহিম শিকদারের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হন এবং মারধর করেন। এ ছাড়া তিনি হুমকি দেন, আখতারউজ্জামানের হয়ে নির্বাচন করলে তাকে মেরে ফেলে লাশ গুম করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের আংশিক সত্যতা মিলেছে।

ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাইসহ তিন প্রার্থী এবং এক প্রার্থীর সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। মামলার তালিকায় আরও রয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং খুলনা-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এসএম কামালের সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজগর বিশ্বাস তারা। 

চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ওই আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী গত ৩০ নভেম্বর বিশাল শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের গালাগাল ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পদ থেকে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া মো. মোশাহিদ আলী আচরণবিধিমালা লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তাকে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি শোকজ করলেও এর ব্যাখ্যা দেননি তিনি। আর খুলনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম কামালের অনুসারী আজগর বিশ্বাস তারার বিরুদ্ধে আচরণবিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় মামলা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ওই ব্যক্তি প্রার্থীর পক্ষে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রচার চালিয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধিমালা লঙ্ঘনের তথ্য রয়েছে ইসিতে। ক্রমান্বয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে ইসির নির্দেশনায় দায়ের করা মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন ২০ দিন কারাভোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা

নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা বাদল শিকদার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাফছা নাদিয়ার ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এ জরিমানা করেন। বাদল ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এবং নৌকার সমর্থক।

তা ছাড়া কুমিল্লা-২ আসনে নৌকা প্রার্থীর দুই সমর্থককে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে নৌকার পোস্টার লাগিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এই দণ্ড দেন।

এমপি রমেশসহ কয়েকজনকে শোকজ

নৌকায় ভোট না দিলে সরকারি ভাতা-সুবিধাভোগীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানোসহ উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নৌকার প্রার্থী এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে শোকজ করেছেন আদালত। বুধবার ঠাকুরগাঁও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ লুৎফর রহমান এই নোটিস দেন।

তা ছাড়া আরও কয়েজনকে নোটিস দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। সাভারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকির অভিযোগে সাভার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেলসহ তিনজনকে নোটিস দিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেন। বুধবার তিনজনকে পৃথক তিনটি নোটিস দেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। বুধবার কমিটির সভাপতি মোহসিনা ইসলাম এই শোকজ করেন।

ইসি
Comments (0)
Add Comment