বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : স্থলপথে যাতায়াতের অন্যতম নিরাপদ ও আরামদায়ক মাধ্যম হলো রেলপথ। পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে রেলগাড়ি একটি জনপ্রিয় পরিবহন। রেল সেক্টর নিয়ে তাই সরকারেরও নানা পরিকল্পনা। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৩০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করা হয়েছে।
তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন রেলপথ, হাতে নেয়া হচ্ছে মেগা সব প্রকল্প। তবে বেশ কিছুদিন ধরে নাশকতার শিকার হচ্ছে রেলওয়ে। গত এক মাসে বড় আকারের কয়েকটি দুর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণহানীসহ বড় ক্ষতির শিকার হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নাশকতা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবার নতুন প্রযুক্তি আনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একইসঙ্গে রেলের নিরাপত্তা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই হাজার ৭০০ সশস্ত্র আনসার সদস্য রেলে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাবে, দেশের ব্যস্ততম রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রতিবছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে যাত্রীর চাহিদা। পণ্য পরিবহন চাহিদা বাড়ছে বছরে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা পূরণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে লাইনের (ট্র্যাক) সংখ্যা একটি থেকে দুটিতে উন্নীত করা হয়েছে। এজন্য তিন ধাপে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। দুই ধাপে রেলপথটির টঙ্গী-ভৈরব এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা অংশ ডাবল লাইন চালু হয় ২০১৮ সালে। শেষ ধাপে আখাউড়া-লাকসাম অংশ চালু হয় চলতি বছরের জুনে। বিপুল পরিমাণ ব্যয়ে রেলপথটি চালু করার পর এতে এখন পর্যন্ত নতুন করে শুধু একটি পণ্যবাহী কনটেইনার ট্রেন চালু করতে পেরেছে রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে নতুন একটি ট্রেন চালু হলেও এর জন্য আলাদাভাবে বিনিয়োগ করতে হয়েছে আরও প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থের পুরোটাই ব্যয় হয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ট্র্যাক বসানোয়।
রেলে নাশকতা ঠেকাতে জনবল বাড়ানোর উদ্যেগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সারা দেশে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রেললাইনে অন্তত ৩০০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা রেলওয়ে জেলায় রয়েছে ৫০টিরও বেশি স্পট। এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্পটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দুই হাজার ৭০০ আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তা অনুমোদন দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেললাইনে নাশকতা ঠেকাতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি, ট্রেন চলাচল করে এমন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া রেল লাইনের নিরাপত্তায় আমরা দুই হাজার ৭০০ আনসার সদস্য চেয়েছি যা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই রেলওয়েতে এ জনবল যুক্ত হবে।
এদিকে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুরো রেলপথকে অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেমের (এসিএস) আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রযুক্তি চালু হলে চলমান ট্রেনের সামনে কোথাও লাইন কাটা থাকলে বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে এসিএস প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পুরো রেলওয়েকে অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা কমলেও এর ব্যবহার কঠিন এবং ব্যয়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, এসিএস প্রযুক্তি চালু করতে ইতোমধ্যে রেলওয়ের পুরো কাঠামো অনলাইনে নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই নতুন এ প্রযুক্তির পাইলটিং শুরু করতে পারবো। এ প্রযুক্তি উচ্চগতির রেলওয়ে সিস্টেমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর। এর স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে যেকোনও ধরনের দুর্ঘটনা আমরা এড়াতে পারবো। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে লোকোমাস্টারদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
বুয়েটের প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, এসিএস বা অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেম মূলত উচ্চ গতির ট্রেনগুলোর সংখ্যাসূচক মডেল এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড মডেলের ভিত্তিতে তৈরি একটা সিমুলেশন বিশ্লেষণ। চীন ও জাপানে এ প্রযুক্তি দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে এনেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি ফলপ্রসূ করতে হলে আগে ব্লক সিস্টেমের অন ডেভেলপিং কম্পিউটার পরীক্ষা এবং চালকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।