বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এ দেশ কোনোদিনই নিরাপদ নয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিস গতকাল শনিবার বিকালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি ও বরগুনা জেলার বামনা এবং পাথরঘাটা উপজেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মনমতো প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন। ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে ইলেকশন, এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশ নিক, শান্তিমতো ভোট দিক। সবাই জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। কেননা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা থাকলে দেশের উন্নতি হয়।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, আবার তারা তাদের সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে (মাঠে) নেমেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিল, ফিশপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারল। বাসে আগুন দিচ্ছে, ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মারা গেল। ঠিক এভাবে তারা আবারো ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এ দেশ কোনোদিনই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারেক জিয়ার হুকুমে দেশে আগুন সন্ত্রাস হচ্ছে। বিএনপির যেসব নেতাকর্মী আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, পাপের ভাগিদার তারাই হবে, তারেক জিয়ার কিছু হবে না। কারণ ও তো ওখানে জুয়া খেলে ভালোই আছে, আর হুকুম দিচ্ছে। আপনারা নাচেন, কার জন্য নাচেন? পালানোর পর জীবনে কোনোদিন সে (তারেক) দেশে আসে নাই। মা মরে মরে, তা-ও দেখতে আসে না। সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক। এ দেশের মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একাত্তর সালে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। এখনো তারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, একটা মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছে, সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কঙ্কাল করেছে। কোনো মানুষের ভেতরে মনুষ্যত্ব থাকলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির নেতা কে? সেটাই প্রশ্ন, দুইটাই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাত এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপরও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা
করে, তার বোন-ভাই যখন আমাদের অনুরোধ করেছে, আমরা তার সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। আর তারেক জিয়া আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, বোমা মেরে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে। তারপরও তার (খালেদা জিয়া) জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আমি তাদের বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সুসংহত করতে চাই আমরা। সব প্রার্থী ভোটারদের কাছে যাবেন। তাদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন তারা সন্ত্রাস শুরু করেছে। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, ওরা সন্ত্রাসী। ওরা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে চলছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে, দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা যাবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, মানুষ নিজের পছন্দমতো ভোট দিতে পারলেই গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ৭৫ সালের পর সাধারণ মানুষের নয়, ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেছিল ঘাতকদের। দেশের মানুষই আমার পরিবার, তাদের জন্যই আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসার রাজনীতি জাতির পিতার মেয়ে করে না বলেই ২০০১ সালের নির্বাচনে হারতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০০৯-২৩ এই ১৫ বছর বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, সব সূচকেই দেশ এগিয়ে গেছে অভূতপূর্বভাবে। উন্নয়নের ধারাটা বজায় রাখতে হবে। বিএনপি অতীতের মতোই নির্বাচন ঠেকানোর নামে ভয়ংকরভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলেছে। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে বিএনপি এসব করতে পারতো না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়ার ছেলে (তারেক) হাওয়া ভবন খুলে দেশকে দুর্নীতির আখড়া, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় নাকে খত দিয়ে বিদেশে গিয়েছে। এখন বিদেশ থেকে হুকুম চালু করেছে পুড়িয়ে মানুষ মারার।
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, আমি সেটা ২০০১ সালে হস্তান্তর করেছি। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আজকে দেশ বদলে গেছে, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারি সেভাবেই আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলার ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই আমাদের এই বাংলাদেশে প্রতিটি জনগণকে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করব। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজব্যবস্থা স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব; এটাই আমাদের লক্ষ্য।
সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা প্রান্তে অনুষ্ঠিত জনসভায় যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এই ছয়টি জেলার নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়াও জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ বিপুল সংখ্যক সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এসব জেলার মানুষের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দু’হাত তুলে তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানান।