বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নাশকতার আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না ট্রেনের। তেজগাঁও রেল স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ভয়ংকর নাশকতার ঘটনায় ট্রেনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়কে ভাবিয়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে রেলের নিরাপত্তায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট নিরাপত্তা দিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। পুলিশ, আনসার, র্যাব, রেলপুলিশ ও আরএনবির প্রায় ১০ হাজার সদস্য সারা দেশের ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তা দিচ্ছে।
এর মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে রেল মন্ত্রণালয় সারা দেশে রাত্রিকালীন ছয়টি ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। এখন থেকে সম্ভাব্য নাশকতার ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে টহল ইঞ্জিন চালু করে রেললাইনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করার ঘোষণা দিয়েছে রেলপথ অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি গতকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশের রেল স্টেশন, রেললাইন ও ট্রেনে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন ও বিমানবন্দর রেল স্টেশনে র্যাবের টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। এই দুটি স্টেশনে র্যাব ডগ স্কোয়াডও মোতায়েন করেছে। এসব তথ্য রেল মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার রেলপথে ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন, তিন শতাধিক মেইল, লোকাল, কমিউটার ও ডেমু ট্রেন চলাচল করে। এর পাশাপাশি ২০টি কন্টেইনারবাহী ও অয়েল ট্যাংকারবাহী ট্রেন চালু রয়েছে। এসব ট্রেনের মধ্যে মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলোর প্রতিটি কোচের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ একটি কোচের সঙ্গে অন্য কোচগুলোর সংযোগ দরজা নেই। এ কারণে এ ধরনের ট্রেনে নিরাপত্তা দিতে প্রতিটি কোচে পুলিশ বা আনসার মোতায়েন করতে হবে, যেটা রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। নিরাপত্তার এই ঝুঁকি এড়াতেই রাত্রিকালীন মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের ছয়টি ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলপথ অধিদপ্তর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারা দেশে ট্রেনে পাঁচটি নাশকতার ঘটনায় ঘটে। এছাড়ায় বিভিন্ন রেললাইনে প্যান্ডেল ক্লিপ, ফিশ প্লেট ও নাটবলটু খুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নাশকতার ঘটনায় গাজীপুরের এক জন ও ঢাকার তেজগাঁওয়ে চার জন যাত্রী নিহত হয়েছে। টাঙ্গাইলে টাঙ্গাইল কমিউটার, জামালপুরে জামালপুর কমিউটার ট্রেন, জয়পুরহাটে উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অন্তত ৯টি কোচ জ্বালিয়ে দিয়েছে নাশকতাকারীরা। গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি উলটে গিয়ে রেলের শতাধিক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে রাতে চলাচলকারী লোকাল, মেইল ও কমিউটারসহ ছয়টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে চারটি ট্রেন চলাচল আগে থেকেই বন্ধ ছিল। রেলপথ অধিদপ্তরের এক চিঠিতে বলা হয়, হরতাল-অবরোধে নাশকতা এড়ানোর জন্য পার্বতীপুর-রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করা উত্তরা এক্সপ্রেসটি চলাচল ২২ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলো। এছাড়া ঈশ্বরদী থেকে রহনপুর লোকাল ট্রেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন বন্ধ থাকবে। রেলের (পশ্চিমাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নাশকতা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ট্রেনগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, রেললাইনে টহল ইঞ্জিন চালু করেছে রেলপথ অধিদপ্তর। সম্ভাব্য নাশকতার ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টহল ইঞ্জিন চালু হবে। এই ইঞ্জিন নির্ধারিত একটি দূরত্ব অতিক্রম করার পর রেললাইন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।
আনসার মোতায়েন
নিরাপত্তা বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, নাশকতার আশঙ্কা থেকেই দেশ জুড়ে কয়েকটি পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রেলের নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতা এড়াতে ঢাকা থেকে প্রতিটি ট্রেন চালুর আগে একটি টহল ইঞ্জিন চালু করা হবে। পাশাপাশি রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। ২০১৪ সালে যেসব যেসব জায়গায় নাশকতা হয়েছিল, সেসব জায়গাতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ সমগ্র লাইনের কোথায় কোথায় নাশকতা হতে পারে তা আগাম বলা সম্ভব নয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে র্যাব ও রেলপুলিশ। রেলপুলিশের পাশাপাশি র?্যাবের ৫০ জন সদস্য রেলওয়ে স্টেশনে নজরদারি করতে মোতায়েন থাকছে। এর সঙ্গে র্যাবের ডগ স্কোয়াডও মোতায়েন থাকছে।
তেজগাঁওয়ের নাশকতায় ভিডিও ফুটেজ
তেজগাঁও রেল স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৯ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব তাদের সংগৃহীত দুই শতাধিক ভিডিও ফুটেজ চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। ভিডিও ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজন বেশ কয়েক জনের ছবি নিয়ে তদন্ত করছে। ঘটনার দিন সোমবার ভোররাত ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে ৪টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত বিমানবন্দর রেল স্টেশনের দ্বিতীয় প্ল্যাটফরমে অপেক্ষমাণ এক যাত্রী ঘিরে ডিবি তদন্ত করছে। ঐ সময় নীল রঙের জিনস প্যান্ট ও ধূসর রঙের জ্যাকেট এবং ক্যাপ পরিহিত এক যুবক ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশনে আসার পর একমাত্র ঐ যাত্রীই ভোররাতে কমলাপুরে স্টেশনে আসার জন্য ট্রেনের ৬ নম্বর বগিতে ওঠেন। যদিও এখন পর্যন্ত গোয়েন্দারা নির্দিষ্ট করে কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে র্যাব ও ডিবি দাবি করেছে, তারা বিরোধীদলীয় দুই জন ও ভাসমান দুই জনসহ ৯ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে।