বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আসন্ন সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য অফ-পিক আওয়ারে সেচপাম্প চালানো, পাম্পগুলোর জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন মেরামতসহ ১৭টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সেচ মৌসুম হিসাবে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময় এবং এ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন সেচ মৌসুমে সেচপাম্পসমূহে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যালোচনাসভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় আলোচনা হয়, সেচ মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য জমিতে পানি সরবাহের কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যায়। আর বোরো ধান উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা দেশের খাদ্য নিরাপ্ততার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সেচকালীন বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। সভায় বলা হয়, এবার সেচ মৌসুমে শুধু সেচের জন্য ২৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি লাগবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ চার মাসে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৮০০ মেগওয়াট।
সভায় জানানো হয়, গত সেচ মৌসুমের এপ্রিল মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আসন্ন মৌসুমে চাহিদা ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৫১টি এবং অপেক্ষমাণ আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৩২টি। শুধু সেচের জন্য জানুয়ারিতে ৩৪৭ মেগাওয়াট, ফেব্রুয়ারিতে ৮৬৫ মেগাওয়াট, মার্চে ১ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট, এপ্রিল মাসে ২ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকবে। মে মাসেও অতিরিক্ত চাহিদা থাকবে ২ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
এবারের সেচ মৌসুমে গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৭৬০ এমএমসিএফডি এবং ন্যূনতম ১ হাজার ৫৪০ এমএমসিএফডি। এ ছাড়া ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন এবং ডিজেলের চাহিদা ১৫ হাজার ৬০০ টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে জানানো হয়, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের কোনো ঘাটতি নেই এবং চাহিদা
মোতাবেক সরবরাহ করা হবে। তবে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আর পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
সভায় বলা হয়, আসন্ন সেচ মৌসুমের জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পিক-আওয়ার পরিহার করে রাত ১১টার পর থেকে পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অফ পিক-আওয়ারে সেচপাম্প ব্যবহারের বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে। সভায় সঞ্চালন লাইনের প্রয়োজনীয় মেরামত বা সংস্কার করাসহ সেচ কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানিসমূহে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখতে বলা হয়েছে। এ সময়ে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয়, সে জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করা; সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রসমূহ সংরক্ষণ ও মেরামতকাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে। ওভারলোডেড সাবস্টেশনসমূহ ও সঞ্চালন লাইনের আপ-গ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম ২ (দুই) মাসের উৎপাদন ক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিত করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন এবং গঠিত মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অন্যদের মাঝে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দপ্তর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।