বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাত পোহালেই ভোট। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ভোটাররা। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন শুধু গণমানুষের রায়ের অপেক্ষা। সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সংসদের ৮০ শতাংশের মতো আসনে নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করতে যাচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত হওয়ায় রোববার জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট হচ্ছে। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কমতি ছিল না। নিবন্ধিত ২৭টি দলের মনোনীতরা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি আসনেই আছে কম-বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্রের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া জাতীয় পার্টির ২৬ আসনের বেশ কয়েকটিতে আছে লাঙ্গল বনাম স্বতন্ত্রের জমজমাট প্রতিযোগিতা। কোথাও কোথাও নৌকার সঙ্গে লাঙ্গলের লড়াই চলছে। আবার দু-একটি এলাকায় নৌকার মূল প্রতিপক্ষ নতুন দল তৃণমূল বিএনপি কিংবা বিএনএমের প্রার্থীরা।
মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার সারা দেশে ২৪০টির মতো আসনে জয়লাভ করতে পারেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। আর বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১০ থেকে ১২টি আসনে জয়ী হতে পারে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পাওয়া ৬টি আসনের মধ্যে একটি বা দুটিতে পরাজিত হতে পারেন ১৪ দলের শরিকরা। আর কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বাকি দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জন নির্বাচিত হতে পারেন। আর ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জন জয়ী হতে পারেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল ভোট বর্জন করে হরতালের ডাক দিলেও তা ভোট গ্রহণ কার্যক্রমে কোনো বাধা হবে না। এসব দল ইতোমধ্যে নির্বাচন প্রতিহত করার মতো অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ফলে সার্বিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে কিছু এলাকায় সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে হার-জিত যাই হোক না কেন, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কত আসন পাবে, তা এখনই বলতে চাই না। তবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। আর ভোটের ফলই বলে দেবে কারা বিরোধী দলে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হলে এ বিষয়টা তখনই পরিষ্কার হবে, স্পষ্ট হবে। কত আসন পাব, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। আমরা ভালো আসনই পাব; তবে কত, সেটা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুলের মতো গণক হতে চাই না।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে এবার ২৭টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ইসি। বাকি ২৭টি দলের মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৪। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ২৬৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৬৫, তৃণমূল বিএনপি ১৩৪, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৫, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) ৫৪, বিএনএফ ৪৫, তরীকত ফেডারেশন ৩৮, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২টি আসনে নির্বাচন করছে। এ ছাড়া ২২১টি আসনে লড়াইয়ে আছেন ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
জানা গেছে, নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন ও ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করার পর থেকেই ভোটের মাঠে খেলা জমে ওঠে। অনেক আসনেই নৌকার প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন স্বতন্ত্ররা। বিগত দশম নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও শতাধিক আসনে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে নেই কোনো শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি দেড়শ আসনে হাড্ডাহাডি লড়াই করেই নির্বাচিনী বৈতরণী পার হতে হবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের। এসব আসনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরোধ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলের দূরত্ব এবং নতুন প্রার্থীর পক্ষে জনমত গড়ে না ওঠায় হেরে যেতে পারে নৌকা।
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির হরতালের মতো উসকানিমূলক কর্মসূচির কারণে প্রথমদিকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ফলাফল নিয়ে পূর্বানুমান করা কঠিন। তবে মানুষের মাঝে যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনে যেহেতু আওয়ামী লীগ ও তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, প্রতীক ভিন্ন হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রার্থীরাই সংখ্যাধিক্যে বেশি নির্বাচিত হবেন।’