বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : টানা চতুর্থবারসহ পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ * বিশ্বে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান
বিশ্ব রাজনীতিতে ইতিহাস গড়লেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার এবং মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে তিনি এ অনন্য নজির স্থাপন করলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন শেখ হাসিনা। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিশ্বে শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান। এরই মধ্যে তিনি চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল শপথ নেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বকে ‘হার্ড পাওয়ার’ হিসাবে বর্ণনা করেছে টাইম ম্যাগাজিন, বিবিসির ভাষায় সেটা ‘ওয়ান উইমেন শো’। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় ৪৬তম স্থানে নাম আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০২২ সালে তার অবস্থান ছিল ৪২ নম্বরে।
বিশ্বজুড়ে রাজনীতি, মানবসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসা প্রভাবশালী নারীদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বেছে নিয়ে গত মাসে এই তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন শেখ হাসিনা। নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গতকাল শুরু হলো পঞ্চম ধাপের যাত্রা। চলতি সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, এক সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রসারির এই সৈনিক বিরোধীদের সঙ্গে যুগপৎভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সদস্যরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সে সময় ইউরোপে অবস্থানের কারণে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক শেখ হাসিনা রাজনীতিতে যুক্ত হন ছাত্রজীবনেই। ১৯৭৫ সালের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে। ওই বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮ম বারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ এ বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় এই স্বপ্ন দেখান তিনি। এবার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে যাত্রা শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয় শেখ হাসিনাকে। ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলায় রাজনীতি থেকে তাকে বাদ দেওয়ার সেই চেষ্টার মধ্যেই দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেন। তারপর থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা কাটিয়ে অবিরাম গতিতে ছুটছেন শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা লাগে অর্থনীতিতে। শক্ত হাতে বৈশ্বিক এই ধাক্কা কাটিয়ে যখন অর্থনীতিকে স্বস্তির জায়গায় আনেন, ঠিক সেই সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে সংকটে ফেলে দেয়।
রিজার্ভ কমতে থাকে, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুরু করে সরকার পতনের একদফার আন্দোলন। নানা ইস্যু সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশে দাঁড়ায়। এ অবস্থার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এবারের নির্বাচনি ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুস-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিলখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
হুঁশিয়ারির পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর; ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছে দলটি। শেখ হাসিনা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দেশবাসীকে বিদেশি তথাকথিত প্রভুদের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি। বলেছেন, তাদের (বিদেশি) কথা শুনে চললে বাংলাদেশ আর এগোবে না।
শেখ হাসিনা ছাড়াও বিশ্বের আরও যেসব নেতা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আছেন, তাদের নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝিতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক স্বাধীন, নির্দলীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিবিষয়ক থিংক ট্যাংক লোই ইনস্টিটিউট। সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের নাম রয়েছে। ৭০ বছর বয়সি হুন সেন কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন ৩৮ বছর। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় পেয়ে ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার এই তালিকায় আরও রয়েছে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, গিনির প্রেসিডেন্ট তেওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো, ক্যামেরুনের পল বিয়া, উগান্ডার ইওওয়েরি মুসেভেনি এবং আফ্রিকার কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু এনগুয়েসো।
ইরিত্রিয়ার ইসাইয়াস আফওয়ারকি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এ তালিকায় রয়েছেন। আরও রয়েছেন পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমান এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি। তবে সবাইকে ছাপিয়ে দেশ শাসনে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। তার একটাই কারণ বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নের রোড মডেলে পরিণত করেছেন, যা দেখে বিস্মিত গোটা বিশ্ব।