বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। নানা সংকটের মধ্যেও এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির গতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩২ হাজার টন পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি। ২০২২-২৩ সালের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টন পণ্য। গত ডিসেম্বরেই আমদানি বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা মূল্যের ২৪ লাখ ২৬ হাজার টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ শিল্পোন্নত ৬টি দেশে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩২২ কোটি টাকা মূল্যের ১৯ লাখ ৯২ হাজার টন পণ্য।
রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার পণ্য পাঠানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা এবং ব্রিটেনে ২৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। রমজান উপলক্ষে আরও বেশি পণ্য আমদানি হবে। এর ফলে দেশে বাড়বে অর্থনীতির গতিধারা—এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমায় আমদানিতে ব্যয়ও কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৪ হাজার ৩৮১ কোটি ডলার। এক বছরে সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় কমেছে ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। পরিমাণ হিসেবে চলতি বছরে তিন মাসে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ পণ্য কম আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি ব্যয় কমেছে ৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমদানি হয়েছে ২ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৪ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি পণ্যের মূল্য ১,০৯,৪২৯.৯৪ কোটি টাকা।
রাজস্ব আয় বেড়েছে: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫,৩৮৪.৮৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে আদায় হয়েছে ১৬,৪৭৪.৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ উল্লিখিত সময়ে চলতি বছর রাজস্ব বেড়েছে ১,০৮৯.৭৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির পরিমাণ কম হওয়া সত্ত্বেও রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় জরিমানার অর্থ থেকেও রাজস্ব আয় হয়েছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় এমন পণ্যের মধ্যে চূর্ণ পাথর, দুধ, পলিপ্রোপিলিন, তাজা বা শুকনো কমলা, পেট্রোলিয়াম তেল এবং পাম তেল—এই ছয় ধরনের পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এই ৬টি পণ্য থেকে গত বছরের তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর ৮০২ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র এবং ডেপুটি কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুনশি বলেন আমদানি রপ্তানিতে আন্ডার, ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা আমরা নজরদারি করছি। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। এসব কারণে আমদানি ব্যয় কমলেও, কাস্টমসের রাজস্ব আয় বেড়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ শতাংশ কনটেইনার, ৪৫ শতাংশ খোলা পণ্যবাহী এবং বাকি ১০ শতাংশ লিকুইড কার্গোবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ আসে ৩৬৯টি, আগস্টে ৩৫০টি এবং সেপ্টেম্বরে ৩৩৮টি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক কালবেলা বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২,৭৭,১৬১ টিইইউ। আগস্টে ২,৫৯,১৪৩ টিইইউ এবং সেপ্টেম্বরে ২,৫৩,৪৯০ টিইইউ আমদানি হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মেরূকরণ এবং নানা জটিলতায় ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল। কালবেলাকে তিনি বলেন, এসব দেশে পণ্য রপ্তানি করে গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অন্তত ২২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৩২ হাজার কোটি টাকার মতো বেশি।
এদিকে গত বছর ১৯টি অফডকে ৮ লাখ ৭৮ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার। মূলত অর্থবছরের শুরুর স্থবিরতা কাটিয়ে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের প্রবৃদ্ধি ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গার্মেন্টস শিল্পের পণ্য রপ্তানি কমলেও, সে জায়গা দখল করছে অন্য পণ্য—এমনটিই বলছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)। বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের চেয়ে পরবর্তী তিন মাসের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের কুটির শিল্প, হস্তশিল্প পণ্যগুলো ইউরোপ-আমেরিকায় যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে পোশাক রপ্তানিও, যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ৫৭ কোটি টাকা বেশি।