বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সর্বশেষ দেড় বছর আগে শেয়ারদরের ওপর যে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা আরোপ করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। গতকাল সোমবার দরপতন থেকে বেরিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দরপতনের আতঙ্ক কাটিয়ে বিনিয়োগে ফিরছেন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী। এতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ছয় মাস পর ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
ইতিবাচক ধারা দেখে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আরও ২৩ কোম্পানির শেয়ারদরের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্য থেকে ৩৫টি বাদে বাকি সবক’টির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হয়েছে গত রোববার।
গতকাল সন্ধ্যায় নতুন এক আদেশে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত যে ১২ শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর রাখার কথা জানিয়েছে, সেগুলো হলো– আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বিএটি বাংলাদেশ, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মা, রেনাটা, রবি এবং শাহজীবাজার পাওয়ার।
গতকালের লেনদেনে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা এই ৩৫ কোম্পানির পৌনে ৩ লাখ আদেশের বিপরীতে ২৫৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির আদেশ ছিল। এর মধ্যে যে ১২টির ফ্লোর প্রাইস এখনও বহাল রাখা হয়েছে, ২ লাখ ৭০ হাজার আদেশের বিপরীতে সেগুলোর বিক্রির আদেশ মূল্য ছিল ১৭১ কোটি টাকা।
রোববারের মতো গতকালও শেয়ারদর ও সূচকের বড় পতনে দিনের লেনদেন শুরু হয়। সকাল ১০টায় প্রি-মার্কেটের শেয়ার কেনাবেচার ভিত্তিতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৬১৯২ পয়েন্টে নেমেছিল। পরের মিনিটে তা আরও কিছুটা কমে ৬১৮৯ পয়েন্টে নামে। এর পরই কিছু শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় সূচক। লেনদেন শুরুর মাত্র ১৭ মিনিট পরই সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৪৬ পয়েন্টে ওঠে। অর্থাৎ ইতিবাচক ধারায় ফেরে। লেনদেনের পরের প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার পুরো সময় ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে সূচকটি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, লেনদেনের মাঝে ১৫০ কোম্পানির শেয়ার দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়েছিল। দুপুর ১২টায় সংখ্যা ছিল ৭৮টি। লেনদেনের শেষে এ সংখ্যা আরও কমে ৮৩টিতে নামে। অবশ্য এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর থাকা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে ৩০টির শেয়ারও ছিল।
দিনের লেনদেন শেষে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সবক’টির কম-বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। স্মরণকালে এমন নজির নেই। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও তালিকাভুক্ত ৩৭০ শেয়ার ও ফান্ডের মধ্যে ২৬৭টির লেনদেন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইতে ২০৭ শেয়ার ও ফান্ডের বাজারদর বেড়েছে। এর মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে ৪১টির। বিপরীতে দর কমেছে ১৪৫টির, যার ৪৫টির দর ৯ থেকে ১০ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিবর্তিত ৪০টির দর। সিএসইতে ১২৩ শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১১৮টির দর কমেছে এবং অপরিবর্তিত ২৬টির।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, রোববার লেনদেনের শুরুর আধাঘণ্টা এবং শেষ দেড় ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে ভর করে কিছু শেয়ারের দর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এতে সূচকও ঘুরে দাঁড়ায়। গতকালের লেনদেনের শুরুতে এ প্রবণতা ছিল বেশি।
লেনদেন বেড়ে হাজার কোটি টাকায়
দরপতনে রাশ টেনে ধরার আভাস পেয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনছেন। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ দরপতনের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছেন।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তোলার পর বিনিয়োগে আস্থা ফিরে পেতে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা ছিল, তার তুলনায় সামান্য লেগেছে। রোববারের সকালের ২১৫ পয়েন্ট সূচকের পতন থেকে শেষের পতন ৯৬ পয়েন্টে নেমে আসাই ‘সাইড লাইনে’ বসে থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় বার্তা ছিল। তার প্রতিফলন সোমবারের লেনদেনে দেখা গেছে।
গতকাল লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় ঢাকার শেয়ারবাজারে ৩৫২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। দ্বিতীয় ঘণ্টায় তা আরও বেড়ে ৫৫২ কোটি টাকা ছাড়ায়। শেষ আড়াই ঘণ্টার আরও ৪৯০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা মিলিয়ে এদিনের মোট লেনদেন ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ছাড়ায়, যা রোববারের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গতকালের লেনদেন গত বছরের ১৭ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘ ছয় মাস পর ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা পার হলো।